পরিবারের ৪ সদস্যকে হত্যা: দোষীদের ধরতে সর্বোচ্চ তৎপর সিআইডি

এই বাড়িতেই একই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করা হয়কলারোয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ চার জনকে নৃশংসভাবে হত্যার রহস্য উন্মোচনে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শনিবার (১৭ অক্টোবর) দিনভর ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুপুরে সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমানের উপস্থিতিতে খলসি গ্রামে নিহত শাহিনুরের বাড়ির পাশের দুটি পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র খোঁজ করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর ওই দিন ঘটনাস্থলে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। কোনোভাবেই যেন নির্দোষ ব্যক্তি সাজা না পায় এবং কোনও দোষী ব্যক্তি কোনোভাবেই যেন ছাড় না পায়, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ করছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে যেয়ে ভূমিকাভিনয় মহড়ার মাধ্যমে যাচাই করে তা নোট করা হয়। প্রতিটি মুহূর্তের তথ্য চুল চেরা বিশ্লেষণ করছে সংস্থাটির সদস্যরা। তবে ডুবুরিরা কয়েক ঘণ্টা ধরে পুকুরে তল্লাশি চালিয়েও কোনও আলামত মেলেনি।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা অনেকদিন পরিকল্পনা করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। এ কারণে ঘটনাস্থল থেকে আলামত পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। অপরদিকে এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ঘটনাস্থল ওই বাড়িতে এখনও কৌতূহলী মানুষের ভিড় কমেনি। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ধারে পুরোবাড়ি ও পাড়াজুড়ে থমথমে ভাব বিরাজ করছে।

কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সোহরাব হোসেন বলেন, একই পরিবারের চার সদস্য হত্যার রহস্য বের করতে সিআইডি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের কাজে সাহায্য করছি। তবে তাদের সঙ্গে সারাদিন থেকে বুঝে-শুনে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কয়েক মাস ধরে ছক করে ঘটনা ঘটানো হয়েছে। জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি। এই রকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে আমার ইউনিয়ন কখনও ঘটেনি।

দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশু মারিয়াসাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান জানান, হত্যাকারীকে খুঁজতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে কাজে করে যাচ্ছি। দ্রুত হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচিত হবে। তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোররাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে একই পরিবারের চার জনকে গলাকেটে করে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (১০) ও মেয়ে তাসনিম (৭)। পরে কলারোয়ার ব্রজবক্সা গ্রামে নানার বাড়িতের চার জনকে দাফন করা হয়। রাতে শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নম্বর- ১৪) দায়ের করেন। এ মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। এ ঘটনায় নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। রায়হানুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শাহিনুরের চার মাসের মেয়ে মারিয়া সুলতানার দায়িত্ব নিয়েছেন ডিসি এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি ওই শিশুর সব ব্যয় বহন করবেন বলে জানিয়েছেন। শিশুটি বর্তমানে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নাসিমা খাতুনের হেফাজতে রয়েছে।


আরও পড়ুন:
‘হত্যাকারীরা পরিচিত না হলে দরজা খুলতো না শাহিনুর’

চিলেকোঠা দিয়ে ঘরে ঢুকে চার জনকে গলা কেটে হত্যা!

পরিবারের চার সদস্য খুনের মামলায় নিহতের ছোট ভাই গ্রেফতার

বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের চিনতে পারায় দুই শিশুকেও হত্যা!

পরিবারের চার সদস্য খুন, শিশুর দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক