ঢাক-ঢোলের কারিগরদের দিনকাল খারাপ যাচ্ছে

122068137_356811558901709_6277315607291243224_n

করোনা মহামারির কারণে স্বল্প পরিসরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবার। ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা চলবে। সচরাচর পূজার আরতি ও মন্ত্রপাঠের সময় ঢাকের বোলে আনন্দময় হয়ে ওঠে মণ্ডপপ্রাঙ্গণ। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্নরকম। অধিক জনসমাগমে মানা আছে। সীমিত করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা। তাই বেশ কমে গেছে ঢাক-ঢোলের চাহিদা। ফলে সারা বছর ধরে এই সময়ের আশায় চেয়ে থাকা ঢাক-ঢোলের কারিগররা বিপাকে পড়েছেন।

সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কারিগর সুবাস ঋষি (৫৬) জানান- ঢাক, ঢোল, দোতারা, ঢুগি, তবলা, খোল, খুনজনি ও একতারাসহ এসব বাদ্যযন্ত্র এক সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি হতো। নীলফামারী জেলার অবস্থান সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারতে এসব বাদ্যযন্ত্রের কদর ছিল প্রচুর। কিন্ত আধুনিকতা ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র।

একই গ্রামের গাটিয়া আবদাল বলেন, 'এই পেশার লোকজন সংখ্যায় কম, এজন্য কেউ আমাদের খোঁজ-খবর রাখে না। শুধু পূজার সময় কাজের চাহিদা থাকলেও সারা বছর অলস থাকতে হয়। তবে এবার পূজাতেও বিক্রি নেই।'

জেলা শহরের গাছবাড়ী এলাকার সাগর চন্দ্র দাস (৪৫) বলেন, 'এটা আমার (জন্মগত) পৈত্রিক পেশা। আমি এই পেশায় ৩৫ বছর ধরে কাজ করছি। আগে একটি ঢোল বিক্রি হতো ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। আর বর্তমানে এই ঢোল বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। তাই এই পেশায় সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বাপ-দাদার পেশার ঐতিহ্য ধরে রাখতে শুধু কাজটুকু করছি। বাকি ১০ মাস গান বাজনা করে পরিবার চালাই।'

একই এলাকার ভূবন বাদ্য যন্ত্র ভাণ্ডারের মালিক মানিক চন্দ্র দাস (৪০) জানান, এখন আর দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের কদর নেই। বর্তমানে কেসিও, কিপ্যার্ট, ড্রামসহ নানা আধুনিক বাদ্যযন্ত্র বের হয়েছে। তাই পরিবারের খরচ চালাতে বছরের ৮-১০ মাস হরিনাম সংকীর্ত্তণের দল নিয়ে মন্দিরে মন্দিরে নাম খেয়ে সংসার চালাতে হয়।

জেলা শহরের হাড়োয়া দুর্গা মণ্ডবের ব্রাহ্মণ মহেষ চন্দ্র রায় বলেন, ঢাকের বোলে জগৎ জননী মায়ের পূজা আনন্দময় হয়ে ওঠে। তাই পূজার ষোল-কলা পূর্ণ করতে ঢাকের বাজনার বিকল্প নেই।

ওই মন্দিরের ঢাকুয়ার হৃদয় ঋষি বলেন, 'আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো দিনের ঢাক, ঢোল। এবার করোনা পরিস্থিতিতে পূজার বায়নাও কম পেয়েছি। তাছাড়া আরতি ও নাজ গান সরকার বন্ধ করে দেওয়ায় এবার সন্ধ্যার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হচ্ছে। তাই ঢাকের প্রয়োজন খুব বেশি একটা হচ্ছে না।'



 

 

122101990_820545292090638_2888575709179768927_n