বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা একাত্তরে স্বাধীনতা এনেছিলাম। কিন্তু সেই স্বাধীনতা বেহাত হয়ে গিয়েছিল। আমরা এবার ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই বেহাত হতে দেবো না। আজকের এই নওগাঁ থেকে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। স্বাধীনতা এনেছি, সংস্কারও আমরাই আনবো। এই স্বাধীনতাটাকে আমরাই রক্ষা করবো। তবেই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রকৃত মর্যাদা দেওয়া হবে।’
শনিবার ( ৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিয়ে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে এনসিপি আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ১৬ বছর অনেক উন্নয়নের গল্প শুনেছি। দেশে নাকি শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু নওগাঁ এসে দেখলাম, ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের সঙ্গে নওগাঁবাসীর সঙ্গে কী ধরণের প্রতারণা করেছে। সেই প্রতারণার দিন শেষ হয়েছে। আমরা চাই না নতুন করে আবার সেই প্রতারণার দিন শুরু হোক। প্রিয় নওগাঁবাসীগণ জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদেরকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবে না। আমরা প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর মতো না। আমরা আপনাদের কাছে শুধু এটুকু বলতে চাই। সময়ের প্রয়োজনে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা রাজনৈতিক হয়ে উঠেছি। রাজনৈতিক দল গঠন করতে হয়েছে। বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে আমরা গড়ে উঠেছি। সেই বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে বিকল্প ইশতেহার আমরা প্রস্তাব করছি। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠন করতে হবে।’
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে নওগাঁবাসীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসনের দ্বারা জুলুমের শিকার হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। এই নওগাঁতেও আমার ভাইয়েরা আন্দোলনে আহত হয়েছে, শহীদ হয়েছে। আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। এক বছর পার হলেও আমরা কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে পারছি না। এ জন্য আমরা বলছি, বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানই হচ্ছে আমাদের প্রধানতম দাবি।’
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ‘এক বছর পার হলেও এখনও পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলার চার্জশিট আসেনি। যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, গণহত্যা করেছে সেই খুনি শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাংলাদেশের ফিরিয়ে এনে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহর সঞ্চালনায় পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও নওগাঁর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মনিরা শারমিন। এ সময় অন্যদের মধ্যে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক শামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপির নেতাকর্মীরা শনিবার বগুড়া, জয়পুরহাট এবং নওগাঁতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। বগুড়া এবং জয়পুরহাটে পদযাত্রা শেষে নওগাঁতে যখন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রবেশ করেন তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
জয়পুরহাট থেকে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা হয়ে নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে পদযাত্রায় যোগ দেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা।
এ সময় রাস্তার দুই পাশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক নেতাদের দেখতে স্থানীয় লোকজন ভিড় করেন। বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের মুক্তির মোড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ভিড় ঠেলে আসতে হয় নাহিদ ইসলাম, আখতার হোসেন ও সারজিস আলমদের।