সরেজমিনে সাঁথিয়া উপজেলার হাঁড়িয়াকাহন গ্রামের সোনাই বিলে গিয়ে দেখা যায় বর্ষার পানিতে ডুবে আছে বিলের মাঠ। স্থানীয়রা জানান, কৃষিপ্রধান এ গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ আর বর্ষায় পানিতে নিমজ্জিত হলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন গ্রামবাসী। তবে, গত কয়েক বছর ধরে শান্ত, সুনিবিড় গ্রামটির দরিদ্র চাষীদের মনে শান্তি নেই। মৎস্যজীবী কালিপদ হালদারের নামে ইজারা নেওয়া বিল উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল দখলে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। নিজ মালিকানা জমিতে মাছ ধরলেও টুটুল বাহিনীর রোষানলে পড়তে হয় তাদের।
হাড়িয়াকাহন গ্রামের কৃষক মো. মনসুর আলী বলেন, বন্যার পানির কারণে আমরা গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে জমিতে চাষ করতে পারি না। এখন বন্যার পানি মাঠ থেকে নেমে আসছে, তাই আমরা মাঠে মাছ ধরার জন্য জাল পেতেছিলাম। কিন্তু যুবলীগ সভাপতির লোকেরা জলাশয়টি দখলে নেওয়ার কারণে মাছ ধরতে বাধা দেয়। আমরা খাওয়ার জন্য কেবল তাদের চোখ এড়িয়ে মাছ ধরছি, তবে বিক্রি করার জন্য মাছ ধরতে পারছি না।
গ্রামের বাসিন্দা ও বিলের জমির মালিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছ ধরতে গেলেই টুটুলের শ্বশুর বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের জাল নষ্ট করে দেয়। তাদের হুমকির কারণে আমরা নিজস্ব জমিতেও যাওয়ার সাহস পাই না।
ভুক্তভোগী মাসুদ বলেন, গত ১৯ অক্টোবর সাঁথিয়া সদরের সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে চককোনাবাড়িয়া গ্রামের ফজর আলী কসাইয়ের ছেলে আজিজল, নন্দনপুরের বক্কার পীরের ছেলে আশরাফুল আলম ও বাবুল হোসেন, তেথুলিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান, আব্দুল মতিনের ছেলে শাকিল হোসেন আমাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায়। নন্দনপুরের সাইফুল ইসলামের বসত বাড়ির উত্তর পাশের আশরাফুল আলমের ডিশ লাইন অফিস ঘরের মধ্যে আমাকে মারপিট করে। এসময় আমার কাছে থাকা ৫৭ হাজার ২০০ টাকা কেড়ে নেয় তারা। এরপর সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি টুটুলের তেঁথুলিয়া গ্রমের বাড়িতে নিয়ে টুটুলসহ সবাই মিলে মারপিট করে।
মাসুদ রানা আরও বলেন, ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হই। কিছুটা সুস্থ হলে ভাই মিল্টনের সঙ্গে থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে, অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে বার বার ঘুরাচ্ছে পুলিশ।
তবে, যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, নন্দনপুর গ্রামের কালীপদ হালদার, সুনীল হালদার এবং গ্রামের কয়েকজন জেলে জলাশয়ের খালটি ইজারা নিয়ে নেয়। আমি গ্রামবাসীকে বাধা দিচ্ছি না। মাসুদ রানাকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে টুটুল বলেন, আমি কাউকে অপহরণ কিংবা নির্যাতন করিনি। বরং, যারা তুলে এনেছিলো তাদের বুঝিয়ে মাসুদকে উদ্ধার করেছি।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ বলেন, কারো নিজস্ব জমিতে মাছ ধরতে বাধা দেওয়া বেআইনি। আধিপত্যের জোরে সোনাই বিলে একটি মহল এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শুনেছি। আমার কাছে কোনও পক্ষই অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে, স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি।
উল্লেখ্য, সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুলের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল, বাড়ি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।