আজ ১২ রবিউল আউয়াল (৩০ অক্টোবর, শুক্রবার), পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) তথা বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। আর এমন দিনেই সম্প্রতি ফ্রান্সে মহানবীর (সা.) ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ।
একই সময় নগরীর সদর রোডের জামে বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহানগর খেলাফত মজলিশ। টাউন হলের সামনে মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহানগর সভাপতি একেএম মাহাবুব আলম ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম পারভেজসহ অন্যরা। সমাবেশ শেষে একই দাবিতে খেলাফত মজলিশের বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। একই সময় বরিশাল সদর, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বানারীপাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, হিজলা, বাবুগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে বরিশালে আলোচনা সভা এবং বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বাদ জুমা নগরীর কালেক্টরেট জামে মসজিদে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুর রাজ্জাক। জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহীদুল ইসলাম এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় পরিচালক এবিএম শফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সভায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। তারা মহানবীর জীবনাদর্শ মেনে চলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। শেষে এক বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো এবং সেখানকার পত্রিকা শার্লী এবদো কর্তৃক বিশ্বনবীর (সাঃ) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে অবমাননার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন। বক্তারা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা বিল পাস এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ফ্রান্সের সকল পণ্য নিষিদ্ধ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একইসঙ্গে ‘সালাম’ ও ‘আল্লাহ হাফেজ’ নিয়ে কটুক্তি করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জিয়াউর রহমানকে বহিষ্কার এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উস্কানির অভিযোগে একাত্তর টেলিভিশনকে বন্ধের আহ্বান জানান।
এর আগে খুলনা মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ড থেকে স্থানীয় মসজিদের ইমামদের নেতৃত্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল ডাকবাংলা চত্বরে জড়ো হয়। সমাবেশে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো’র কুশপুতুল দাহ এবং তাঁর ছবি ও ফ্রান্সের পতাকার ওপর জুতা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন মুসল্লিরা।
বক্তারা বলেন, 'মেড ইন ফ্রান্স’ লেখা পণ্য বর্জন করুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুফতি মতিউর রহমান, সাংবাদিক পলাশ চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম, কাকন, মাস্টার শওকাত আলী, মিজানুর রহমান, শেখ শাহিন, মফিজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল হাবিব, রজিবুল ইসলাম, উজ্জল প্রমুখ।
এ সময় জেলা ইমান আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও নীলফামারী বড় মসজিদের ইমাম মাওলানা খন্দকার মোহাম্মদ আশরাফুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি মো. হাবিবুল্লাহ, নতুনবাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. অহেদুল ইসলাম, উকিলের মোড় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. নূর নবী, কলেজ স্টেশন জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মো. হাবিবুল্লাহ, স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদের ইমাম মো. আশিকুর রহমান, হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম মো. মিজানুর রহামন, শাহী জামে মসজিদের ইমাম মো. আবু মুসা প্রমুখ। বক্তারা ওই ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শণের নিন্দা জানিয়ে দোষী ব্যক্তির দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার নামাজ শেষে পলাশবাড়ির চৌরাস্থা মোড়ে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পলাশবাড়ীর ঈমাম ওলামা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সমাবেশে সাধারণ মুসুল্লি ও মসজিদ-মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়।
সমাবেশে বক্তারা ফ্রান্সের সকল পণ্য বয়কটের আহ্বান এবং ফ্রান্স সরকারের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া এবং বাংলাদেশ সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। এদিকে, সদর, সাদুল্লাপুর, ফুলছড়ি উপজেলাসহ কয়েকটি এলাকায় জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন মুসল্লিরা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মাসউদুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মমিন, মাহবুবুর রহমান, ফরহাদুজ্জামান, আবুল হোসেন ও মাওলানা রুহুল আমিন। সমাবেশ শেষে হাজারও মুসল্লির অংশগ্রহণে এক বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দিনাজপুর শহরের অ্যাকাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন কমিটির ব্যানারে একটি র্যারি বের করা হয়। র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় অ্যাকাডেমি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বিশাল মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে র্যালি চলাকালে শহরের লিলি মোড় ও মর্ডান মোড় এলাকায় মহানবীর (সাঃ) ব্যাঙ্গ ছবি প্রদর্শন ও অবমাননার অভিযোগে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ছবিতে জুতা পেটা ও লাথি দেয় মুসুল্লিরা। দিনাজপুর ইসলামি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ড. এরশাদ আল বুখারির নেতৃত্বে মিছিলে জেলার বিভিন্ন ইমাম ও মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা ফ্রান্সের তৈরি সকল প্রকার পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।