আমনের ফলন নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন কুমিল্লার কৃষকদের




কুমিল্লাকৃষিতে সমৃদ্ধ জেলা কুমিল্লা। এই জেলায় কমবেশি সব ধরনের ফসল আবাদ হয়। তবে ধান চাষে এখানকার কৃষক বেশি আগ্রহী। এ বছর কুমিল্লার সদর, সদর দক্ষিণ, চান্দিনা, দেবিদ্বার, বরুড়া, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, লালমাই ও বুড়িচংসহ জেলায় এক লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমিনে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে। আবাদ হওয়া জমি জুড়ে আমন ধানের সোনালী শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। আর এ দোলায় লুকিয়ে আছে হাজারও কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।

সাগরে নিম্নচাপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনও বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকদের বাড়ির আঙিনা ভরে উঠবে সোনালী ধানে। করোনায় আর্থিক সংকট কাটিয়ে আমনের ফলন ঘরে তুলে ঘুরে দাঁড়াতে চান কৃষকরা।

কুমিল্লা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় কৃষকদের আবাদ করা রোপা আমন থেকে তিন লাখ ১২ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমনের গত মৌসুমের তুলনায় এই বছর প্রায় ১০ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছে। চলতি বছরে রোপা আমনের বীজতলা এবং ধান রোপণের সময় অতিবৃষ্টি হয়েছিল। গত কয়েকদিন আগেও সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ গড়িয়ে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় অতিবৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকের মাঠে থাকা ফসলের বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কার্তিকের শেষে অগ্রহায়ণের শুরু থেকে কৃষকরা রোপা আমনের ধান কাটা শুরু করবে। এর মধ্যে বড় ধরনের কোনও দুর্যোগ বা বিপর্যয় না ঘটলে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

লালমাইয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন জানান, এই বছর লালমাইতে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করা হয়েছে। বর্তমান আবহাওয়ায় মাঠে কৃষকের ধান ভালো হয়েছে। এই উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন ধানের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আবহাওয়া ঠিক থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

আরও কয়েকজন উপ-সহকারী মাঠ কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষক তাদের মাঠের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। খুশিতে কৃষক পরিবারসহ ব্যবসায়ীরা। খেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডালের ওপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানখেতের ক্ষতিকারক পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। কখন নতুন ধান ঘরে তুলবেন এজন্য অধীর অপেক্ষায় কৃষকরা। প্রতিটি বাড়িতে চলছে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুবজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, চলমান করোনায় আমনের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারেন এবং কোনও সমস্যায় না পড়েন এজন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে।

তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় এই মৌসুমে কুমিল্লায় প্রায় ১০ হাজার বেশি হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। করোনায় সব কিছু থমকে দাঁড়ালেও সচল ছিল কৃষি। আমনের এবারের আবাদ থেকে কুমিল্লায় কৃষকরা ৩ লাখ ১২ হাজারের বেশি মেট্রিক টন ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।