বেনাপোলে রাজস্ব ফাঁকির ‘মহোৎসব’

চকলেটের সঙ্গে আসছে শাড়ি, ব্লিচিং পাউডারের কথা বলে কফি!

বেনাপোল কাস্টমসের নতুন ভবনদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে যেন চলছে রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব! গত ১৫ দিনে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে পাঁচ কোটি টাকার পণ্যের চালান আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাতটি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্সও বাতিল করেছে। তবু থামানো যাচ্ছে না রাজস্ব ফাঁকির প্রবণতা।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতি বছর ৩৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জন্য চলতি অর্থবছরে ছয় হাজার ৫শ’ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে একটি অসাধু চক্র রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি দেখা গেছে, চকলেটের চালানের সঙ্গে উন্নত মানের শাড়ি, ব্লিচিং পাউডারের চালানে কফি ও ওষুধ, মেশিনারি পার্টসের ভেতরে প্যাডলক ও রেক্সিন আমদানির মতো ঘটনা ধরা পড়েছে। যে পরিমাণ আনার কথা তার অতিরিক্ত ১৯ টন মাছ আটক করা হয়েছে। এসব ঘটনায়  দুই কোটি ২০ লাখ টাকার জরিমানা আদায় করেছে কস্টমস কর্তৃপক্ষ। জব্দকৃত পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। রাজস্ব ফাঁকি রোধে ঝটিকা অভিযানও শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ীরা চাইছেন, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

রাজস্ব ফাঁকির কারণে যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, রিমু এন্টারপ্রাইজ, তালুকদার এন্টারপ্রাইজ, এশিয়া এন্টারপ্রাইজ, সানি ইন্টারন্যাশনাল, মদিনা এন্টারপ্রাইজ (ভাড়ায় খাটানো হয়), মুক্তি এন্টারপ্রাইজ, প্রিয়াংকা এন্টারপ্রাইজ। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় ধরনের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটায় মেসার্স রিড এন্টারপ্রাইজ। চার হাজার ৬৭৫ কেজি ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে বস্তার মধ্যে কফি, ওষুধ জাতীয় পণ্য আমদানি করে তারা। ঘোষণার অতিরিক্ত ৩৬০ কেজি কফি ও ১৯২৭ কেজি ওষুধ জাতীয় পণ্য আটক করা হয়। এই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মূল মালিক রতন কৃষ্ণ হালদার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরে এরকম মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বেড়েই চলছে। কখনও কাস্টমস-বন্দরকে ম্যানেজ করে, আবার কখনও বিভিন্ন পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে চলছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির উৎসব। মাঝে মধ্যে দুই-একটি চালান আটক হলেও অধিকাংশই থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘শুল্ক ফাঁকির ঘটনা দুঃখজনক। এসব ঘটনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানিও বেড়ে যাচ্ছে।’

বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স বাতিল করেছি। মিথ্যা ঘোষণায় যেসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে তাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করছি।’

তিনি আরও জানান, ‘রাজস্ব ফাঁকি রোধে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ জিরো টলারেন্স ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বন্দরে রাতে কাস্টমসের একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা তৎপর রয়েছি।’