মৃত বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ভাতা উত্তোলন, ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের মানববন্ধন

 

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা৯০ বছরের বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের আবেদন করেন। আবেদনটি যাচাই বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায় আম্বিয়া খাতুন স্বামীর নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু তিনি ভাতার বিষয়টি জানতেন না। আর তার স্বামী আবদুল কাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশও নেননি। তবু প্রতিমাসেই মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তার নামে ভাতা তোলা হচ্ছে।

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে আম্বিয়া খাতুনের ছেলে মো. শাহীন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মৃত বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ভাতার টাকা তুলছেন। আম্বিয়া খাতুনের স্বামী আবদুল কাদের ১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

এদিকে ছেলের এমন জালিয়াতির ঘটনার বিচার দাবি করেছেন আম্বিয়া খাতুন। সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের প্রেমু সুপার মার্কেটের সামনে ছেলে শাহীনের বিরুদ্ধে অন্য দুই ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করেন তিনি।

মানববন্ধনে মা আম্বিয়া খাতুন ও ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, শাহীন একজন দুর্নীতিবাজ ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর। সে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরিতে থাকাকালে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া শাহীন তার স্ত্রীকে এক মুক্তিযোদ্ধার নমিনী বানিয়ে টাকা উত্তোলন করছে। তাই এই প্রতারকের বিরুদ্ধে তদন্তসহ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।

অভিযুক্ত শাহীনের ভাতিজা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার দাদাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে শাহীন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারপর তার প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ করলে শাহীন আমার পরিবারকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এখন আবার নতুন মামলার হুমকি দিচ্ছে। এবার নাকি তার মেয়েকে দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করাবে। প্রশাসনের কাছে আমরা এই প্রতারণা ও জালিয়াতির বিচার চাই।

শাহীনের ভাই আবদুল মালেক জানান, তার বাবা মৃত আবদুল কাদের কখনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তার ছেলে প্রতারণা করে তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন।

স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন জানান, আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যাননি এবং যুদ্ধে অংশও নেননি। ভাতা উত্তোলনের বিষয়েও আমি কিছু জানি না। শুনেছি আমার ছেলে শাহীন এমনটি করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহিন বলেন, ভাইদের সঙ্গে আমার পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্ব থেকে তারা আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে।

তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ময়নাল হোসেন বলেন, আবদুল কাদের নামে এলাকায় কোনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। এই নামে কাউকে চেনেন না বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অভিযোগটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।