পুলিশ কনস্টেবলের অসদাচরণের বিচার না পেলে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার ঘোষণা

কনস্টেবলের অশালীন আচরণের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ চন্দ্র মণ্ডলের সংবাদ সম্মেলন।

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে পুলিশের এক কনস্টেবলের বাজে আচরণ ও কটূক্তি শিকার হয়ে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দীনেশ চন্দ্র মণ্ডল নামে এক মুক্তিযোদ্ধা। এসময় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা অনুযায়ী এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি। বিচার না পেলে আত্মহত্যা করার ঘোষণা দিয়েছেন দিয়ে তিনি। 

সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে আশাশুনি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভেজা চোখ নিয়ে হাজির হন বীর মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ চন্দ্র মন্ডল। উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের মৃত মানিক চন্দ্র মণ্ডলের ছেলে ও একজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা তিনি। তার ছেলেও পুলিশে চাকরি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার সময়  চীনা ডায়াং ব্র্যান্ডের নিজস্ব চায়না মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে আশাশুনিতে যাচ্ছিলেন তিনি।  পথে আশাশুনি বাইপাস হাইওয়ে-৩  রাস্তার দক্ষিণে দাঁড়ানো এসআই জুয়েল তাকে গাড়ি থামানোর সংকেত দেয়। তার নির্দেশমতো গাড়ি থামাই। এসময় সেখানে থাকা সোহাগ নামের এক কনস্টেবল তাকে তুই তোকারি করে বলে, ‘এই গাড়ি রাস্তার পাশে আন।’ তিনি বলেন, ‘কাকা কি হয়েছে বলেন?’ এরপর ওই কনস্টেবলকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে গাড়িটি রাস্তার মাঝ থেকে একপাশে আনায়।

এরপর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় শুনেও তুই তোকারি অব্যাহত রাখে এবং অত্যন্ত অমার্জিত ভাষায় রূঢ়ভাবে খিস্তিখেউর করে। এরপর সে গাড়ির একটি লাইট প্লায়ার্স দিয়ে কেটে নেয়। এরপর হর্নও কেটে নিতে চায়। বিষয়টি এসপিকে জানানোর কথা বললে কনস্টেবল সোহাগ তার প্যান্টের চেইন খুলে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখিয়ে বাজে মন্তব্য করে।

 তিনি জানান, ‘এ সময় সেখানে শতাধিক পথচারী উপস্থিত ছিল। আশপাশের দোকানদারও আমার সঙ্গে কী ব্যবহার হয়েছে, তা দেখেছে। ঘটনাটি শুধু আমার সঙ্গে ঘটে নাই। আমার আগে অপর এক মুক্তিযোদ্ধা আফসার গাজীকেও একইভাবে অপমান করা হয়েছে বলে ওই সময় জেনেছি। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আফসার গাজীর গাড়ির সামনে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত স্টিকার ছিল। সেগুলোও ছিঁড়ে ফেলে দিতে উদ্যত হয় ওই পুলিশ কনস্টেবল সোহাগ।’ তার অফিসার তাকে নিবৃত্ত করে নাই।

তিনি বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবারও কেঁদে ফেলেন এবং মনোকষ্টে সঙ্গে আনার একটা বিষের বোতল দেখিয়ে বলেন, ‘মহাত্মন, এহেন অপমান জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের জন্যে অতীব দুঃখজনক ও আত্মহত্যার শামিল।’

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘ওই পুলিশ কনস্টেবল কোন পরিবার থেকে এসেছে, কার ইন্ধনে এ সব কথা বলেছে, বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।  সঠিক বিচার যদি না পাই তাহলে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই অপমান সইতে পারবো না। আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো।’

এ ঘটনায় তিনিসহ আরেক ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা আফছার গাজী বিষয়টি লিখিতভাবে ওই দিন সন্ধ্যায় আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান। পরে মৌখিকভাবে থানা অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) অবহিত করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফছার আলী গাজী, আব্দুর করিম, কাত্তিক চন্দ্র মন্ডল, মাষ্টার আকবর আলীসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। 

এ বিষয়ে জানতে পুলিশ কনস্টেবল সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।