বন ও বিলের জায়গা দখল করে চলছে পুকুর তৈরির মহোৎসব

126496453_1244749342593992_361267132051020378_n

দিনাজপুরের বিরামপুরে আশুরার বিল ও বনের সরকারি জায়গা দখল করে পুকুর বানানোর মহোৎসবে মেতে উঠেছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বিল ও বনের জীব-বৈচিত্র্য। স্থানীয়রা বলছেন, তাদের পুকুর বানানোর কাজে বাধা দিয়েও লাভ হচ্ছে না।

বিরামপুরের খানপুর ইউনিয়নের ধানজুড়ি এলাকায় অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ঐতিহাসিক আশুরার বিল ও বনের অর্ধেক অংশ। ৩২১ একর এলাকা নিয়ে বনভূমি আর ২৩২ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিল অবস্থিত। দীর্ঘদিন ধরে সেই বিলে স্থানীয়রা অনেকেই মাছ চাষ করে খেতেন, আবার কেউবা ধান চাষাবাদ করে খেতেন। সম্প্রতি সেই বিল ও বনের বেশ কিছু জায়গা দখল করে সেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পুকুর খননকারী অনেকে তাদের পত্তন নেওয়া সম্পত্তি দাবি করলেও প্রশাসনের অভিযানের সময় তারা কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, এসময় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বিলের জায়গা দখল করে ৪টি পুকুর খননের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে একজনকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা স্থানীয়রা এখানে বিল হিসেবেই দেখে আসছি। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত সেই বিলে আমরা স্থানীয়রা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলাম। পরে তাতে কেউ কেউ ধান চাষ করতে থাকেন। বর্তমানে সেই বিলের জায়গা নিজের দাবি করে দখল করে তাতে স্কাভেটর দিয়ে পুকুর বানাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল, ইতোমধ্যেই বিলের জায়গা দখল করে বেশ কিছু পুকুর খোঁড়াও হয়ে গেছে।

পুকুর খননকারী তায়েজ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'এগুলো আমাদের পত্তন নেওয়া সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের বাব-দাদারা এসব জমি করে খেয়ে আসছেন, সেই সূত্রে আমরাও করে খেয়ে আসছি। এগুলো বনের সম্পদ হলেও তো মানুষ করে খেয়েছে। আগে থেকে এগুলো তো আর পতিত পড়ে ছিল না। ওই সূত্রে আমরাও খেয়ে আসছি। এখন যদি সরকার বলে যে, খাওয়া হবে না, উঠে যান, তাহলে কী কেউ থাকতে পারবে এখানে! বর্তমানে এখানে আবাদ হচ্ছে না। আমরা গরিব চাষি। তাই এখানে মাছ চাষের জন্য পুকুর খোঁড়া হচ্ছে।'

126119389_377913963476705_8031340400032228445_n

পাশে অপর একটি পুকুরের পাহারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে পুকুর খোঁড়া করা হচ্ছে। আমি এখানে গত আড়াই মাস ধরে দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছি। নবাবগঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, রুহুল কহিদুল মিলে এই পুকুর করছেন।'

বনবিভাগের চরকাই রেঞ্জ কমকর্তা নিশিকান্ত মালাকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'বনের জায়গা দখল করে তাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত সেখানে অভিযান চালিয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয় ও তার পরামর্শ মোতাবেক এই ঘটনার দায়ে একজনকে আটক করে মামলা দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।'

বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিমল কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আশুরার বিলের বিরামপুর অংশে কিছু মানুষ বিলের মধ্যে পাড় দিয়ে পুকুর বানানোর চেষ্টা করছে ও দখল করার চেষ্টা করছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এসময় ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়, সরকারি সম্পত্তি যেন কারও দখলে না যায়, সেই বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।'