গত মাসেও টার্গেট অনুযায়ী চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে সেতুতে। আর ৩৯তম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে এ মাসে চারটি স্প্যান বসানোর টার্গেটও সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ২২ মিনিটের দিকে মাওয়া প্রান্তের ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এই তথ্য নিশ্চিত করেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের। আবহাওয়া ভালো ও কোনও কারিগরি জটিলতা না থাকায় সহজেই স্প্যান বসানো সম্ভব হয় বলে জানান তিনি।
এর আগে, সকাল ৯টার দিকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন 'তিয়ান-ই' মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে স্প্যানটিকে বহন করে রওনা দেয়। এরপর দূরত্ব অতিক্রম সেখান থেকে নির্ধারিত পিলারের কাছে এসে পৌঁছায় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে।
পদ্মা সেতুর প্রকৌশল সূত্র জানিয়েছে, দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে স্প্যান বহনকারী ভাসমান ক্রেনটি পৌঁছে নোঙর করার কাজ শুরু করে। ছয়টি ক্যাবলের (তার) মাধ্যমে মূল নদীতে নোঙর সম্পন্ন করে পজিশনিং করার কাজটি সম্পন্ন করা হয়। এরপর স্প্যানটিকে ধীরে ধীরে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। তারপর রাখা হয় দুটি পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর পাঁচ হাজার ৮৫০ মিটার। সেতুর যতই এগোচ্ছে পদ্মাপারের মানুষদের মাঝেও বইছে আনন্দের জোয়ার।
এদিকে, সেতুর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারের আশপাশে চলাচলকারী নৌযানগুলো যাতে স্প্যান বসানোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত না করে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দুটি বোট সারাক্ষণ সেখানে অবস্থান করে নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে নৌযান চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেয়।
প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল। প্রথম স্প্যান থেকে শুরু করে আজ ৩৯তম স্প্যান বসানো পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় ছিল তিন বছর এক মাস ২৮ দিন। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সেতুর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) বসানোর পরিকল্পনা আছে প্রকৌশলীদের। চলতি বছরের বিজয় দিবসের আগেই মাওয়া প্রান্তে ৪১তম স্প্যানটি বসার কথা রয়েছে।
মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে দুটি স্প্যানের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এরমধ্যে বসানো হয় এক হাজার ২৩৯টির বেশি রোড স্ল্যাব। এছাড়া দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এরমধ্যে বসানো হয় এক হাজার ৮৪৮টির বেশি রেল স্ল্যাব।
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।