বুধবার (২ ডিসেম্বর) বধ্যভূমি বড়স্টেশন মোলহেড এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। সেখানে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাগলের পাল। রক্তধারার পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক দোকান-পাট। রক্তধারার সাইনবোর্ডে লাগানো হয়েছে জুতার পোস্টার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিন নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছেন মানুষজন। আছে ভিক্ষুকের যন্ত্রণা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেছি- চাঁদপুরে ঘোরার মতো প্রধান জায়গা এটি। সে হিসেবে এখানে বন্ধুরা সবাই ঘুরতে এসেছি। আমরা কেউই জানি না- এটি একটি বধ্যভূমি। এটি যদি বধ্যভূমি হয়েই থাকে তাহলে এর ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত জেলা ব্র্যান্ডিং বইটিতেও এই বধ্যভূমিকে নৈসর্গিক বিনোদনের স্থান হিসেবে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- চাঁদপুর বড় স্টেশনের পশ্চিম পাশে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়ার সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ত্রিকোণাকার অংশটিই মোলহেড নামে পরিচিত। এ স্থান হতে পশ্চিম দিগন্তে খুব স্পষ্টভাবে সূর্যাস্ত দেখা যায়। ইংরেজি শব্দ মোলহেড মানে বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ অভিঘাত হতে স্থল ভূমিকে রক্ষার জন্য পাথর বা কংক্রিট দ্বারা নির্মিত শক্ত প্রাচীর বা বাঁধ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলিত প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণি হতে চাঁদপুর শহরকে রক্ষার জন্য বোল্ডার দ্বারা এটি নির্মিত হয়।
চাঁদপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা জীবন কানাই চক্রবর্তী বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে এনে এ বধ্যভূমিতে আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের অনেকেই হাত-পা বেঁধে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা জীবন কানাই বলেন, মানুষ ঘুরবে, নদীর দৃশ্য দেখবে, রক্তধারাটাও দেখবে। এ থেকে যার যেমন অনুভূতি হয়। সব মানুষতো আর এক রকম না। সবাইকেতো আর পাহারা দেওয়া সম্ভব না। এখানে প্রবেশের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকবে। স্থানটিতে যাচ্ছে-তাই যেন না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। যা করা হবে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই করতে হবে। তিনি বলেন, এখানকার ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ রক্ষায় আমরা বসবো, কাজ করবো।
তিনি বলেন, গান-বাজনা, নাচ-গানতো শহীদ মিনারেও হয়। এখন যদি জায়গাটি বন্ধ করে দেই তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? তারপরও স্মৃতিফলক করা যেতে পারে। কারা কারা মারা গিয়েছিল, কি হয়েছিল- এখানে আগতরা এসব বিষয়ে পড়ে জানতে পারবেন। সমস্যা হচ্ছে- আমরা করতে চাইলে সেটি একটু কঠিন। এ জায়গাটি হচ্ছে রেলওয়ের। এর ব্যবস্থাপনায় পৌরসভা ও জেলা প্রশাসন। এ তিনটি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে কোনও উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানান তিনি।