হোটেলে ডেকে নিয়ে বলাৎকারচেষ্টা, মাদ্রাসাছাত্রের ছুরিকাঘাত

নরসিংদী

নরসিংদী শহরের একটি আবাসিক হোটেলে এক মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের চেষ্টার সময় এনামুল হক (৪৭) নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। বলাৎকারের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে নরসিংদী মডেল থানায় ওই ছাত্র বাদী হয়ে এনামুল হককে আসামি করে মামলা করেছেন।

সোমবার দিবাগত রাতে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন আবাসিক সায়মা হোটেলের একটি কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাত ১১টার দিকে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ ওই হোটেল থেকে দুজনকে আটক করে। মঙ্গলবার দুপুরে মামলা হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

১৬ বছর বয়সী ওই ছাত্রের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে। সে গাজীপুরের টঙ্গীর একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। একটি মোবাইল ফোন কেনার জন্য ওই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে সে নরসিংদী এসেছিল। অন্যদিকে, অভিযুক্ত এনামুল হক ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার ষোলগাই গ্রামের আবুল হাসানের ছেলে। একটি অস্ত্র মামলায় নরসিংদী জেলা কারাগারে থাকা ছেলের জামিন করাতে চার-পাঁচ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এনামুল হক নরসিংদী এসেছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসা পালানো ছাত্রটির সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় নরসিংদী রেলস্টেশনে একটি চায়ের দোকানে এনামুল হকের পরিচয় হয়। এনামুলের মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে একটা কল করার সুযোগ চেয়েছিল ছাত্রটি। একপর্যায়ে রাতটা পার করার জন্য এনামুলের কাছে আশ্রয় চায় সে। এর পরেই তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই হোটেলে আসেন এনামুল হক।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল ( সোমবার) সন্ধ্যায় এনামুল হক এক কিশোর মাদ্রাসাছাত্রকে নিয়ে আমাদের হোটেলে আসেন। এখানে চার-পাঁচদিন থাকবেন বলে তিনি জানান। মাদ্রাসাছাত্রটি কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে যাবে বলে আমাদের জানানো হয়। পরে তাকে দোতলার এক নম্বর কক্ষটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাত ৮টার দিকে ওই কিশোরের চিৎকার শুনে লোকজন সেখানে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় এনামুল হকের উরু থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে আর ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওই মাদ্রাসাছাত্র। ওই সময় মাদ্রাসাছাত্রটি জানায়, তাকে বলাৎকারের চেষ্টা করায় এনামুল হককে ছুরিকাঘাত করেছে সে।

পাশের কক্ষের মো. হাসান জানান, এ ঘটনায় এনামুলকে আহত করার পর ৯৯৯-এ ফোন করে ওই মাদ্রাসাছাত্র। তবে সংযোগ না পেয়ে নিজেই খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, হোটেল গিয়ে দুজনকেই আটক করি। এনামুলের উরুতে দুই ইঞ্চির মতো রক্তাক্ত ক্ষত ছিল। তাকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর পায়ে পাঁচটি সেলাই দেওয়া হয়। পরে দুজনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় ওই মাদ্রাসাছাত্রের কাছে একটি ছুরি, আইফোনসহ দুটি মুঠোফোন ও সিসা জাতীয় মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। পুলিশ ওই মাদ্রাসাছাত্রের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আজ সকালে থানায় এসে মামলার প্রস্তুতি নেন। দুপুরে ওই মাদ্রাসাছাত্র নিজেই বাদী হয়ে এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, বলাৎকারের চেষ্টা করায় এনামুলকে ছুরিকাঘাত করার কথা স্বীকার করেছে ওই মাদ্রাসাছাত্র। এ ঘটনার মাদ্রাসাছাত্রের করা একটি ভিডিওচিত্র পেয়েছি।  মামলা হওয়ার পর এনামুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।