তোতার ট্রিপল হ্যাট্রিক

নবমবার কাউন্সিলর পদে জয় পাওয়ায় সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হন রোস্তম আলী তোতা।

অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি। নির্বাচনে যতদিন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার প্রাপ্ত ভোটের ধারের কাছেও আসতে পারেননি কোনও প্রতিপক্ষ। একবার দুই বার নয়, টানা নবমবারের মতো ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের রোস্তম আলী তোতা। ৬৬ বছর বয়সী এই কাউন্সিলর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ২ হাজার ১৮১ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে টানা নবম বারের মতো নির্বাচিত হয়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ইতিহাসে জয়ের রেকর্ড ট্রিপল হ্যাট্রিক করেছেন এই জনপ্রিয় কাউন্সিলর।

রোস্তম আলী তোতা ১৯৮১ সাল থেকে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে রয়েছেন। এবার নিয়ে টানা নবম বার নির্বাচিত হলেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন, ‘তোতার বিকল্প নেই। তিনি যেকোনও ভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়ান। ওয়ার্ডবাসীর সুখ-দুঃখ নিজের মতো করে দেখেন। ভোর, সকাল কিংবা গভীর রাতে ডাকলেও তাকে পাওয়া যায় । তিনি যতদিন নির্বাচন করবেন আমরা তাকেই ভোট দেবো।’

এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলি রায় বলেন, ‘তোতার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ালে জয়লাভ তো দূরের কথা, জামানত বাঁচানো নিয়ে শঙ্কায় থাকেন প্রতিপক্ষরা। এর আগে মাত্র একবার প্রতিপক্ষের জামানত বেঁচেছে। তাছাড়া প্রতিবারই জামানত হারিয়েছেন প্রতিপক্ষরা। তিনি সবসময় এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাদের সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। এজন্যই ওয়ার্ডবাসী তার বিকল্প কাউকে চিন্তা করেন না।’

অতীতের মতো এবারও তোতার কোনও নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি নেই। সৎভাবে মানুষের পাশে থাকার কারণে সবাই তাকে ভালোবাসে বলে মনে করেন এই কাউন্সিলর। এবার নির্বাচনে তিনি ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৬১০। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সারাফাত হোসেন চৌধুরী বিপ্লব পেয়েছেন মাত্র ৪ শ’ ২৯ ভোট।

কাউন্সিলর রোস্তম আলী তোতা

রোস্তম আলী তোতা জানান, ১৯৭৯ সালে প্রথম উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন তিনি। এরপর তিনি মুকুল ফৌজ নামে সংগঠনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ান। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয় লাভ করেন। সেই থেকে আর পরাজয় তাকে ছুঁতে পারেনি। প্রতীক নয়, নামেই তাকে ভোট দেন স্থানীয় জনগণ।

তোতা বলেন, ‘প্রথম পরাজয়ের পর বুঝতে পারি মানুষের ভালোবাসা অর্জন ছাড়া জনপ্রতিনিধি হওয়া সম্ভব নয়। তখন থেকে মানুষের পাশে থেকে যেকোনও ভাবেই মানুষের উপকার করার চেষ্টা করি। প্রতিদান হিসেবে মানুষের ভালোবাসা পাই।’

পৌরসভার বরাদ্দের আশায় থাকলে মানুষের মন জয় করা সম্ভব নয় জানিয়ে এই কাউন্সিলর বলেন,‘সততা, আচার আচরণ-ব্যবহার দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হয়। মানুষের যেকোনও সমস্যা নিজের সমস্যা ভেবে তার প্রতিকার করার চেষ্টা করতে হয়। তবেই মানুষের সমর্থন ও দোয়া পাওয়া যায়।’

জেলা শহরের মিস্ত্রিপাড়ায় টিনশেড বাড়িতে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তোতার সাধাসিধে সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অন্য দুই সন্তান স্নাতকের শিক্ষার্থী। পিতার জনপ্রিয়তায় গর্ববোধ করেন সন্তানরা।

বাকি জীবনটা জনগণের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এই জনপ্রতিনিধি বলেন,‘জীবনে তিনটা চাকরি পেয়েছিলাম। ব্যবসার সুযোগও ছিল। কিন্তু, সে পথে না গিয়ে জনগণের সেবার পথ বেঁচে নিয়েছি। জনগণের সেবা করেই, জনগণের পাশে থেকেই যেন আমার মৃত্যু হয়।’