সাড়ে ৯ হাজার টন কমলা আসবে রাঙামাটির পাহাড় থেকে

ভূ-প্রকৃতিগত কারণে শস্যজাতীয় ফসলের চেয়ে ফলের উৎপাদন বেশি হয় রাঙামাটি জেলায়। পাহাড়ে ফল উৎপাদনে রাঙামাটির সুনাম বরাবরই। প্রতি বছর আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, জাম্বুরা ট্রাকে ট্রাকে দেশে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে কমলা উৎপাদন হতো শুধু সাজেকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাঙামাটির অন্যান্য অঞ্চলেও বেড়েছে কমলার চাষ। এই জেলায় এবার ৯ হাজার ৬০০ টন কমলা উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন চাষি ও কৃষি কর্মকর্তারা।রাঙামাটির কমলা

রাঙামাটি বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে আগে সাজেকের কমলার চাহিদা ছিল। তবে এখন শুধু সাজেকেই নয়, রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে আম, কাঁঠাল, আনারসের পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে কমলা চাষও। আর ভূ-প্রকৃতির কারণে কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় অন্যান্য ফলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কমলার বাগানও। চাষিরা জানিয়েছেন, সরকারি প্রণোদনা পেলে কমলা চাষ আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। আর কৃষি অফিস জানিয়েছে, সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে কমলার বাগান বিগত সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।রাঙামাটির কমলা

নানিয়ারচরে আনারসের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে চাষিরা কমলা বাগান করার দিকে ঝুঁকেছেন। উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের শৈলশ্বরীর তালুকদার পাড়ায় ২৫-২৩ জন  চাষি কমলা বাগান করা শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। ২০১৫ সাল থেকে কমলাগাছে ফলন দেওয়া শুরু হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বছর কমলার ফলন অন্যান্য বছরের তুলনা ভালো হয়েছে। আর বছর করোনার কারণে ভিটামিন সি এর চাহিদা থাকায় বাজারে বেশ আগ্রহ রয়েছে কমলার প্রতি। সে জন্য বাজারে দামও চড়া। বাজারে আকার ভেদে এখন কমলার জোড়া ৪০ তেথে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।রাঙামাটির কমলা

নানিয়াচর বুড়িঘাট এলাকার বাগান মালিক জ্ঞান রঞ্জন চাকমা জানান, এ মৌসুমে বাগানের তিন শতাধিক গাছ থেকে তিন লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। আরও তিন লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

একই এলাকার আরেক বাগানি বিমল কান্তি চাকমা বলেন, চলতি মৌসুমে কমলার ভালো ফলন হয়েছে। এরই মধ্যে তার সব কমলা বিক্রি হয়ে গেছে। যা থেকে তিনি চার লাখ টাকা পেয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে জেলায় চলতি মৌসুমে দুই হাজার একর জমিতে কমলার ফলন হয়েছে। গত বছর এক হাজার ৯৫১ একর জমিতে চাষ হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় কমলার চাষ হয়েছে ৬০০ একর জমিতে।রাঙামাটির কমলা

খেতে সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় ভোক্তাদের আগ্রহ বেশি এখানকার কমলার প্রতি। সাধারণ মানুষও কিনছে পাহাড়ের কমলা। তবে দাম একটু বেশি বলছেন ক্রেতাদের কেউ কেউ। যদিও আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে একটু বেশি দাম পরছে বলে জানালেন খুচরা বিক্রেতারা।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, ‘এখানকার কমলা স্বাদে ভালো, আকারে বড়। ফলনও হাচ্ছে বাম্পার। এ কারণে চাষিরা কমলা চাষে ঝুঁকছেন বেশি। চলতি বছরে ৯ হাছার ৬০০ টন কমলা ফলনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে। করোনায় ভিটিমান সি এর চাহিদার কারণে ভালো দাম পাচ্ছে চাষিরা। কমলা চাষে যারা এগিয়ে আসবে সহায়তা দেওয়া হবে।’