দুই জেলেকে ‘টেনে নিয়ে গেছে’ বাঘ, নিরুদ্দেশ একজন

কাঁকড়া ধরতে অবৈধভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করে তিন জেলে বাঘের কবলে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের তালপট্টি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে দুই জনকে বাঘ রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে বনের গহিনে নিয়ে গেছে বলে গাছে উঠে রক্ষা পাওয়া অপর এক জেলে মোবাইলে পরিবারকে জানান। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, তার সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, গত বুধবার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের রতন (৩৫), মিজানুর (৩৯) ও আবু মুছা (৪০) কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবু মুছা রতন স্বজনদের মোবাইল ফোনে জানান, বিকালে বনের মধ্যে তালপট্টি এলাকায় খালে কাঁকড়া ধরার সময় রতন ও মিজানুরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। এ সময় তিনি দৌড়ে বনের ভেতর উঁচু গাছের মগডালে উঠে আত্মরক্ষা করেন। তবে গাছের ডালে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে নিচে এসে মিজানুর ও রতনকে আর খুঁজে পাননি আবু মুছা। সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে আবু মুছা বিষয়টি রতন ও মিজানুরের পরিবারকে জানান।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী নুরনবী ইসলাম ইমন জানান, রতন ও মিজানুর গত বুধবার বনে যান। তারা ফিরে আসেননি। তাদের সঙ্গে থাকা মুছার সঙ্গেও মোবাইলে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। বাঘের কবলে পড়ার খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা নৌকা ও ট্রলার নিয়ে বনের অভ্যন্তরে খুঁজতে রাতেই রওনা হন।

কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম জানান, ‘আমি জানতে পেরেছি রতন ও মিজান নামে দুই জন বনজীবী সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে পড়েছে। মুসা নামে এক বনজীবী বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, তারা বনে যাওয়ার জন্য পাস পারমিট গ্রহণ করেনি। বিষয়টি বন বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। রতন পশ্চিম কৈখালী গ্রামের বাঙালের ছেলে ও মিজানুর একই গ্রামের মনু মিস্ত্রির ছেলে। তারা দুই জনই বিবাহিত।

বনজীবী রতনের বোন রত্না জানান, ‘আমরা জানতে পেরেছি রতন ও মিজানকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। আর কিছু জানতে পারিনি।’

বন বিভাগের কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমি কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। রতন ও মিজানুর নামের দুই ব্যক্তি মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস-পারমিট গ্রহণ করেনি। অবৈধভাবে তারা বনে প্রবেশ করে। তারা বাঘের আক্রমণে পড়েছে কিনা তা তার জানা নেই। শুক্রবার দিনের বেলায় এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা সম্ভব হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি বিকাল ৫টার দিকে দুটি বাঘকে শ্যামনগর উপজেলার বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়নের বিপরীত পাশে সুন্দরবনের মুন্সিগঞ্জ কলবাড়ি এলাকায় চুনা নদীর পাড়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বাঘ ছোট একটি খাল পার হয়ে সেখানে অল্প কিছু সময় অবস্থান করে আবারও বনের গভীরে চলে যায়। বাঘ দুটি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ের কাছে আসে। এ বিষয়ে স্থানীয় টাইগার টিমের সদস্যরা ও বন বিভাগ যৌথভাবে বুধবার সন্ধ্যায় মাইকিং করে স্থানীয়দের সতর্ক করে। এ ঘটনায় সুন্দরবন এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুন-

৯ বছর পর সুন্দরবনে লোকালয়ের কাছে বাঘের দেখা