ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গাবাহী পাঁচটি জাহাজ

শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বোট ক্লাব থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌ-বাহিনীর পাঁচটি জাহাজ। সেখানে এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন বলে জানা গেছে।  গতকাল বৃহস্পতিবার এই রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে বাসে করে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রামে।  আজ দুপুরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এর আগে গত ডিসেম্বরের ৪ এবং ২৯ তারিখে দুই ধাপে প্রায় তিন হাজার ৪৪৬ জন রোহিঙ্গাকে দ্বীপটিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসানচরে পৌঁছানো রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৮০১ জন পুরুষ, ৯৮৭ জন নারী এবং ১৬৫৮ জন শিশু। এর আগে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচর নিয়ে যায় সরকার।

শুক্রবার সকালে ভাসানচর প্রকল্পের (আশ্রয়ণ প্রকল্প-৩) উপ-প্রকল্পের পরিচালক কমান্ডার এম আনোয়ারুল কবির জানান, ‘তৃতীয় ধাপে ১৭'শ বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে পাচঁটি জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রওনা দিয়েছে জাহাজগুলো। দুপুর নাগাদ তারা ভাসানচরে পৌঁছাবে। তাদের বরণে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের আবাসন

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় সূত্রে মতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে বাসগুলো চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের ট্রানিজট ক্যাম্পে পৌঁছায়। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার তাদের জাহাজে তোলা হয়। এই ধাপে দুই দিনে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি, উখিয়া কুতপাং ক্যাম্প-২ ইস্টের রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (ইনচার্জ) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, কতুপালং রেজিস্ট্রার ও তার শিবির থেকে ৫৪৮ রোহিঙ্গা ভাসানচরে উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করেছে।

চট্রগ্রাম থেকে তৃতীয় দফা রোহিঙ্গার দলটি ভাসানচরে রওনা দিয়েছে উল্লেখ করে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) খোরশেদ আলম খান জানান, ‘স্বেচ্ছায় স্থানান্তরে রাজি হওয়া আরও তিন হাজার রোহিঙ্গাকে দুই দিনে ভাসনচরে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।’

গতকাল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-এর অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোশারফ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার ক্যাম্পগুলো থেকে ৩৫টি বাসে করে এক হাজার ৭৮০ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে পৌঁছান।     

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেওয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।