লকডাউনেও রাজশাহীর আরডিএ মার্কেট খুললেন ব্যবসায়ীরা

সর্বাত্মক লকডাউনে বন্ধ রাখার নির্দেশ ভঙ্গ করে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে তারা দোকান খুলতে শুরু করেন। আগের দিন বুধবার (২১ এপ্রিল) তারা মার্কেট খোলার দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সকালে এসে তারা দোকান খুলে বসেছেন।

এদিকে দোকান খুলে দিতে ব্যবসায়ী নেতারা রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। জেলা প্রশাসক তাদের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে বলেন। জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল জানান, ব্যবসায়ীরা তার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। ২৮ এপ্রিলের পর সরকার লকডাউন শিথিল করলে তারা ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন। আজ দোকান বন্ধ করবেন।

তবে বেলা ১টা পর্যন্ত সাহেববাজার আরডিএ মার্কেটে এ ঘোষণা অনুযায়ী কোনও দোকানই বন্ধ করা হয়নি। পুলিশ দোকান খুলতে বাধা না দিলেও রাস্তার যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে। তবে মার্কেটের পেছন দিক দিয়ে ক্রেতাদের ঢুকতে দেখা গেছে।

.রাজশাহীতে ৮ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন করে ঈদের আগে লকডাউনের বিকল্প ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছিলেন। তারা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন বাজার প্রতিনিধির সমন্বয়ে কমিটি করে বাজারের স্বাস্থ্যবিধি তদারক করার প্রস্তাব করেছিলেন। তারা বলছিলেন, প্রায় ১৩ মাস ধরে তারা লোকসান গুনছেন। বর্তমানে প্রতিটি ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের পথে বসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।

এরপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকান খোলার কোনও অনুমতি না পেয়ে ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার সকালে দোকান খুলে ফেলেন। তাৎক্ষণিক দোকানে কিছু ক্রেতাও আসতে শুরু করেছেন। তারা অন্য কাজে এসে দোকান খোলা দেখে বাজারে ঢুকে পড়েছেন। ব্যাংকের কাজে এসেছিলেন শাহনেওয়াজ করিম। তিনি জানান, মার্কেট বন্ধ থাকার কারণে বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার হঠাৎ দোকান খোলা পেয়ে কিনতে এসেছেন।

পাশেই একটি পোশাকের দোকানে শিশুদের জন্য কাপড় পছন্দ করছিলেন মিনা বিন মুকুল। তিনি জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গেলে টাকা পান, না গেলে পান না। লকডাউনে গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে মানুষ আসতে পারছে না। তার চাকরিও চলছে না। তার স্বামীর ভাতের হোটেল আছে। সেটাও তিনি খুলতে পারছেন না। তিনটা বাচ্চাকে বোঝাতে পারছেন না যে তারা সমস্যায় আছেন। তিনি বলেন, লকডাউন দিলে বাসায় বাসায় খাবার পৌঁছে দিতে হবে।

দোকানি নাজমুল হক বললেন, তার দুই ছেলে। এক ছেলে উচ্চমাধ্যমিক ও অন্য ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পেছনে খরচ আছে। ১৫ হাজার টাকা দোকানভাড়া। ব্যবসা না হলেও দিতে হচ্ছে। গত এক বছর নিজের দুই লাখ টাকা পুঁজি শেষ করে পাঁচ লাখ টাকার ঋণে পড়েছেন। তাদের বাঁচার উপায় নেই।

শেখ কালেকশন নামের একটি পোশাকের দোকানের কর্মচারীরাও দোকান খুলে বসেছেন। কিন্তু তাদের দোকানে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কোনও ক্রেতা নেই। তারা বলেন, ‘ক্রেতারা তো জানেন না যে দোকান খোলা পাওয়া যাবে। লকডাউনে তারা বাইরে আসেননি। চলতি পথের ক্রেতারা ছোট দোকানগুলোতে ঢুঁ মারছেন। এখন দেখা যাক।’

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘রাজশাহী আরডিএ মার্কেট সকালে ব্যবসায়ীরা খুলে দেন। এরপর তাদের নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে আমার মিটিং হয়। তারা কথা দেয় আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখবেন। সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলবে। আমার কোনও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করছি না। আজকে (বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল) তারা নিজেরাই বন্ধ করে দেবেন। আগামীকাল (শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল) থেকে মার্কেট কেউ খুলবে না।’