দরপত্র ছাড়াই চলছে সরকারি ভবনের সংস্কার

দরপত্র ছাড়াই খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনের সংস্কার কাজ চলছে। কিন্তু কার নির্দেশে, কে এই কাজ করছে, কত টাকার কাজ, টাকার উৎস কোথায়? এসব জানেন না সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা। সরেজমিন পানছড়ি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবকটি আবাসিক ভবন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সেখানে চলছে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ভবনের ছাদসহ বিভিন্ন অংশ সংস্কার এবং রঙের কাজ। তবে কোন প্রকল্পের আওতায় কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এ কাজের অর্থায়ন করা হয়েছে তার কোনও তথ্যই দিতে পারেননি পানছড়িতে কর্মরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ কাজের কোনও তথ্য আমার কাছে নেই। এটি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের খাগড়াছড়ি জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহানের কাছেও। তিনি বলেন, ‘যদি এমন কোনও কাজ হয়ে থাকে তবে তা উপজেলা পরিষদের ফান্ড থেকে হতে পারে।’

নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীরএ প্রসঙ্গে চার দফায় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের পানছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার। প্রথমে তার কাছে ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, ‘এগুলো ভুয়া খবর। উপজেলা পরিষদের ডরমেটরিতে কোনও সংস্কার কাজ হচ্ছে না। আমাকে বিব্রত করার জন্য কেউ আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে।’

পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট কাজের ছবি ও ভিডিও তুলে নিয়ে কথা হয় এই প্রকৌশলীর সঙ্গে। এবার তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা ছোট ছোট সংস্কার কাজগুলো কোনও টেন্ডার ছাড়াই করিয়ে নিই। পরে সমন্বয় মিটিংয়ে ভাউচার উত্থাপন করি।’

কোনও টেন্ডার ছাড়া সরকারি ভবন সংস্কার করে পরে তার বিল নেওয়া বৈধ কিনা এমন প্রশ্ন করলে তৃতীয়বারে তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের আমি চিনি না। আমিও আসলে জানিও না যে, কে বা কারা এই কাজ করতে লোক পাঠিয়েছে।’

বিনা টেন্ডারে সরকারি ভবনের সংস্কার কাজ চলছে এবং বেশ কিছু কাজ শেষ হয়ে গেছে, অথচ এ ব্যাপারে আপনারা যারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আছেন তারা কিছুই জানেন না? এমন প্রশ্নে এবার মুখ খুললেন প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাস। শেষবারে তিনি জানালেন, স্থানীয় ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব ও তার ব্যবসায়িক সহযোগী হোসেন শরীফ এই সংস্কার কাজ ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছেন।

জানা গেছে, ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব এবং হোসেন শরীফের সঙ্গে প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাসের দারুণ সখ্যতা রয়েছে। এই অফিস উত্তমের অঘোষিত কার্যালয়। তার বসার জন্য এই কার্যালয়ে ব্যবস্থা আছে, এমনকি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাটও আছে। এসব কথা প্রকৌশলী অরুণকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।

বরাদ্দ না থাকার পরেও কীভাবে সংস্কার কাজ করছেন জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয় স্থানীয় ঠিকাদার উত্তম কুমার দেবের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় তিনি বলেন, ‘কথা বলার মতো সময় আমার নেই। আপনার যা ইচ্ছে হয় লিখে দেন।’

ঠিকাদার উত্তমের ব্যবসায়িক সহযোগী হোসেন শরীফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এটা উত্তম বাবু বলতে পারবেন।’