দাদার মৃত্যুর খবর শুনে যাওয়ার পথে মা-বাবা-বোনদের হারালো মীম

দাদার মৃত্যুর খবরে মা-বাবা ও দুই বোনের সঙ্গে খুলনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ৯ বছরের মীম। মীমদের বাড়ি খুলনার তেরখাদা এলাকায়। তার বাবা মনির হোসেন, মা হেনা বেগম, ছোট দুই বোন রুমি ও সুমিসহ সোমবার (৩ মে) সকালে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য উঠেছিল স্পিডবোটে। সকাল ৭টার দিকে একটি বালু বোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় মীম ছাড়া পরিবারের বাকি ৪ সদস্যই মারা যায়। ওই দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২৬ জন।

শিশু জানায়, দুর্ঘটনায় সবাই আঘাত পেলেও সে ছিটকে পড়ে যাত্রীদের একটি ব্যাগের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিহত ২৬ জনের মধ্যে তেমন কারোই পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন। দুপুরের দিকে লাশগুলো উদ্ধার করে নেওয়া হয় বাংলাবাজার ঘাটের পাশে শিবচরের দোতারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে এক পর্যায়ে তাকে নিয়ে যায় প্রশাসনের লোকজন। তাকে নেওয়া হয় দোতরা স্কুল মাঠে। লাশ রাখার ঘরে একে একে দেখানো হয় পরে থাকা লাশ গুলো। বাবা-মা ও দুই বোনের লাশ দেখে চিৎকার করে ওঠে মীম।

স্বজনদের লাশ শনাক্ত করতে নেওয়া হচ্ছে মীমকে

কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বলছিল, তাদের বাড়ি খুলনার তেরখাদা এলাকায়। তারা ঢাকার মিরপুরে থাকে। বাবা মনির সেখানে টেইলারিংয়ের কাজ করতেন। সোমবার সকালে কাঠালবাড়ি এলাকার স্থানীয়রা দুর্ঘটনার পর পরই শিশু মীমকে উদ্ধার করে শিবচরের রয়েল হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখানেই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থ হয়।

মীম আরও জানায়, সেহেরি খাওয়ার পর তারা বাসে করে ঢাকা থেকে শিমুলিয়ায় আসে। এর পর স্পিডবোটে চলে। স্পিডবোটটি দ্রুত চলছিল। তখন তারা তিন বোন কান্নাও করেছে। ছোট একটি নদীতে প্রবেশ করার পর ধাক্কা লাগে। এরপর আর তার কিছু মনে নেই।

মীমকে উদ্ধারকারী ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার ফকির বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর শিশুটির জ্ঞান ফেরে। এরপরই মা-বাবা ও বোনদের খুঁজতে থাকে আর চিৎকার-চেঁচামেচি করে। একটু সুস্থ হলে তাকে লাশ শনাক্ত করতে আনা হয়। একজন মানুষ হিসেবে এমন দৃশ্য সহ্য করা যায় না।

স্বজনদের লাশ শনাক্ত করতে নেওয়া হচ্ছে মীমকে

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, মীমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ বহন করে এবং একটি গাড়িতে করে পুলিশ প্রশাসন লাশ নিয়ে পৌঁছে দেয় নিহতের পরিবারের কাছে। নিহতদের লাশগুলো পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, এই দুর্ঘটনায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।