স্পিডবোট দুর্ঘটনা: বরিশাল ও খুলনায় ৮ জনের দাফন সম্পন্ন

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত ২৭ জনের মরদেহ গ্রহণ করেছেন স্বজনরা। এরমধ্যে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় সহোদরসহ ৪ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারখালী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে একই পরিবারের বাবা মা ও দুই বোনকে। এসময় উভয় স্থানে হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তেরখাদায় নিহতদের পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য শিশু মীম তার ছোট চাচা মো. কামরুজ্জামানের হেফাজতে রয়েছে। দাদির মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মীমদের পরিবার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।

বরিশাল প্রতিনিধি জানান, শিবচরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহতদের চার জন ছিলেন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার। এরমধ্যে সাইফুল হোসেন ও রিয়াজ উদ্দিন ছিলেন সহোদর। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উপজেলার উলানিয়া করোনেশন স্কুল মাঠে এই দুই ভাই এবং আশা গ্রামের সাইফুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও সকাল ১০টায় পাতারহাট হাইস্কুল মাঠে মুনির চাপরাশির জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে তাদের মরদেহ নিজ নিজ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। দাফনকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ নাথ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৪টায় সরকার ব্যবস্থাপনায় নিহত ৪ জনের মরদেহ মেহেন্দিগঞ্জে এসে পৌঁছে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, নিহত ৪জনই ব্যবসায়ী। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দোকানের জন্য মালামাল কিনতে ঢাকায় গিয়েছিলেন তারা। মাল আসছিল ট্রাকে, তারা সড়ক পথে বরিশাল ফিরছিলেন। সড়কপথের মাঝখানে পড়ে পদ্মা নদী। এপারে মাওয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে ওপারের শিবচর যাওয়ার পথে তাদের স্পিডবোটটি দুর্ঘটনা কবলিত হয়। এসময় তারা চারজনসহ স্পিডবোটের ২৭ যাত্রীর সলিল সমাধি হয়।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, মনির হোসেনের মা লাইলী বেগম রবিবার (২ মে) রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে ৮৫ বছর বয়সে মারা যান। খবর পেয়ে কান্নাকাটি করতে করতে ঢাকা থেকে সপরিবারে বাড়ির পথ ধরেন তিনি। তাদের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারখালী গ্রামে। তার পরিবার সদস্যদের মধ্যে আরও ছিলেন স্ত্রী হেনা বেগম ও তিন মেয়ে সুমি (৫), রুমি (৩) ও কোলের শিশু মীম। লকডাউন থাকায় সরাসরি যাওয়ার উপায় ছিল না। মনির হোসেন বাড়ির পথ ধরতে পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে কষ্টে সৃষ্টে মাওয়া ঘাটে আসেন। মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার তাড়া থাকায় সামনে যে স্পিডবোট পেয়েছেন সেটাতেই ওঠেন। স্পিডবোট মাওয়া থেকে শিবচরের দিকে যাওয়ার পথেই ঘটে অঘটন। একটি বাল্কহেডের সঙ্গে তাদের স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই ডুবে যান পরিবারের সবাই। বিধাতার ইচ্ছায় মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার হয় কেবল কোলের শিশু মীম। মায়ের মরদেহ এ জীবনে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি মনির হোসেনের। স্ত্রী হেনা, অপর ‍দুই মেয়ে সুমি ও রুমিসহ নিহত হন তিনি।

তাদের মরদেহ উদ্ধার করে মঙ্গলবার ভোরে খুলনায় পৌঁছে দেওয়া হলে তার পরিবারের অন্য সদস্যসহ পুরো গ্রামে মাতম শুরু হয়। শিশু মীমকে ছোট চাচা মো. কামরুজ্জামানের হেফাজতে দেওয়া হয়।

কামরুজ্জামান বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভাই পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে আসার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান। ফলে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় মায়ের লাশ আগেই বাবার পাশে দাফন করা হয়। এরপর সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ৪টি লাশ তেরখাদা থানায় আসে। সেখান থেকে লাশ বুঝে নিয়ে বাড়িতে আনা হয়। বুঝতেই পারছেন আমাদের কী অবস্থা। মঙ্গলবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে ৪টি লাশ পাশাপাশি দাফন করা হয়। আগামী শুক্রবার নিহতদের কুলখানি হবে।

তিনি জানান, আমার ভাইয়ের ছোট মেয়ে মীমকে শিবচরের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মীমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।