ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গী ও কালিয়াকৈরের দুটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও ভাঙচুর করেছেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া আরও ২৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সোমবার (১০ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন– মিজানুর রহমান (২৪), হাসান মিয়া (২৬), রুবেল মিয়া (২২), জাহিদ হোসেন (২৫), রনি (২৪), মামুন (২৬), সোহেল (২২), রুবেল হোসেন (২৪), ইমরান হোসেন (২৪), রাজীবুল ইসলাম (২৬), মামুন মিয়া (২৭), রবি (২১), লতিফ (১৯), রনি (২২), এহসানুল হক (৩৫), রাজিবুল (২৬), কলি বেগম (২৪), নিজাম উদ্দিন (৩০), সমলা (২৫), ইয়াসিন (২০), হাসিনা (৪০), সাব্বির (২২), সাবিনা (২৫), রিনা বেগম (২০)। গুরুতর আহত ১৩ জন শ্রমিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
টঙ্গীর হামীম গ্রুপের ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড কারখানার পোশাক শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে ঘোষিত তিন দিনের ছুটির পরিবর্তে শ্রমিকরা ১০ দশ দিনের ছুটি দাবি করেন। কর্তৃপক্ষ সাত দিনের ছুটি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সোমবার সকালে ১০ দিনের ছুটির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে আমাদের ওপর হামলা ও গুলি করে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় শ্রমিকরা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে ইট-পাটকেল ছুড়লে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে জীবন রক্ষার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসেল নিক্ষেপ করে। আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’
টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পারভেজ হোসাইন জানান, ওই সংঘর্ষের ঘটনায় রাবার বুলেটে আহত ২০ জন শ্রমিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহত একজন পুলিশ সদস্যকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকার স্টার লিঙ্ক ডিজাইন লিমিটেড নামের কারখানার শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওই কারখানার শ্রমিকরা সোমবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে জানতে পারেন তাদের ঈদের ছুটি তিন দিন দেওয়া হয়েছে। খবরটি কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ছুটি বাড়ানোর দাবিতে তারা কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়কের পাশে নিয়ে যায়। শ্রমিকদের দাবি, তাদের কমপক্ষে ১২ দিনের ছুটি দিতে হবে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ পরিদর্শক কমর উদ্দিন বলেন, ‘কারখানার শ্রমিকেরা ১২ দিনের ছুটি চাইলেও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করলে তারা আন্দোলন বন্ধ করেন। দুই কারখানা চত্বরেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
সংঘর্ষে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল পাশা ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রুবেল হাওলাদারসহ পাঁচ জন আহত হন। তাদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া জানান, টঙ্গী মিলগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ নয় শ্রমিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।