আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায়, গ্রেফতার ৬

কৌশলে বিভিন্ন লোকজনকে বাসায় ডেকে নিয়ে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করা চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে চাঁদপুরে সদর মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ মে) ভোরে চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। চাঁদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো– চাঁদপুর শহরের ট্রাকঘাট এলাকার শিহান পাটওয়ারীর স্ত্রী তাসলিম আক্তার জেরিন (২০), চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাঙ্গালখালীয়া এলাকার সাদিয়া বেগম (২৭), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদি রামপুরের মিন্টু বেপারীর স্ত্রী হাসিনা বেগম মুন্নি (৩৫), একই উপজেলার শোভান গ্রামের মোস্তফা (৪৫), উত্তর গোবিন্দপুর ইউনিয়নের প্রত্যাশী গ্রামের কাজল খান (২২) এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের শিংগাইর গ্রামের আয়েশা আক্তার নিপা (১৯)।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লোকজনকে কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে অশ্লীল ছবি ধারণ করে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করে। কিন্তু, অনেকেই সম্মানহানির ভয়ে মুখ খোলেনি। তবে একই ঘটনার শিকার হন শহরের ব্যবসায়ী মো. মাইনুল ইসলাম নামে এক যুবক। পরে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার দোকানের পাশে অভিযুক্ত মোস্তফার হার্ডওয়ার দোকান থাকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই দোকানি চক্রের সদস্য জেরিনের সঙ্গে যোগসাজশে ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। গত ৭ মে সকাল ১০টার দিকে ভিকটিম মাইনুল চাঁদপুর পৌরসভার সেবা সিটি সেন্টারে এসির কাজ করছিলেন। এ সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল আসে। ফোনে এক নারী জানতে চায়, তিনি কোথায় আছেন। মাইনুল তা জানালে ওই নারী বাসার নষ্ট ফ্রিজটি মেরামত করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। পরে গত ৭ মে দুপুরে গ্রেফতার জেরিন ও সাদিয়া বেগম শহরের সেবা সিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে ওই যুবককে শহরের আলিমপাড়ার ড্রিম হাউসের তৃতীয় তলায় হাসিনা বেগমের ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ তাকে বসিয়ে রাখার পর দুপুর দেড়টার দিকে ওই তিন নারী ভিকটিম যুবককে পানি পান করার জন্য বারবার বলতে থাকে। তবে সে রোজা থাকার কারণে পানি পান করেনি। একপর্যায়ে কাজল খান ও নিপাসহ চার জন ওই বাসার ভেতরে ঢুকে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। পরে জেরিন বলে, মাইনুল ইসলাম তার সাথে খারাপ কাজ করেছে। সেজন্য সে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ভিকটিম ১০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কান্তির নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের ছয় জনকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, ‘তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের কাছে আগেও সংবাদ ছিল। কিন্তু অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে কোনও অভিযোগ করতো না। সর্বশেষ সোমবার ওই ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করলে আমরা মামলা নিয়ে তাদের গ্রেফতার করি। মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় একজন পলাতক রয়েছেন।’