ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে জোয়ারের পানি পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবল জোয়ারে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের জেলেখালি ও নাপিতখালিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বালির বস্তা দিয়ে তা বন্ধের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
বুধবার (২৬ মে) বেলা ১১টার পর থেকে উপকূলের নদীগুলোতে দুই-তিন ফুট উঁচু ঢেউ শুরু হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার নীলডুমুর এলাকায় পাকা সড়ক উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বিজিবি সদস্যরা ও গ্রামবাসী মিলে তাৎক্ষণিক বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
একই সময়ে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোড়ের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। অপরদিকে কালীগঞ্জের কাকশিয়ালি নদীর পূর্ব নারানপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কালীগঞ্জ হাসপাতালসহ পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভাঙনের ফলে কপোতাক্ষের পানি পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। এছাড়া আশাশুনির প্রতাপনগরের কুড়িকাহনিয়া লঞ্চঘাট ভেঙে পানিতে সয়লাব হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। সুন্দরবন লাগোয়া উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো জোয়ারের পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জের চুনা নদীর পানি উপচে গ্রাম ও বাজার তলিয়ে গেছে। জেলার ১৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও দেড় হাজার স্কুল-কলেজ উপদ্রুত মানুষের জন্য খুলে রাখা হয়েছে। তাদের উদ্ধার, খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা দেওয়ার সব ব্যবস্থাও করে রেখেছে জেলা প্রশাসন।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘নদীতে পানির প্রচণ্ড চাপ। এভাবে পানির চাপ থাকলে বাঁধ টিকিয়ে রাখা কঠিন।’
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, ‘৩নং ওয়ার্ডে প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।’
আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব আমাদের উপকূলে খুব বেশি পড়েনি। সাতক্ষীরা শহরে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হয়েছে। তবে উপকূলে তিন থেকে ছয় ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।’