রাজশাহীতে জমে উঠেছে গোপালভোগ আমের বাজার

প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী রাজশাহীর বাজারে তিনটি জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের গোপাল ভোগ আমের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি। এজন্য বর্তমানে এই আমের বাজার জমে উঠেছে।

জানা গেছে, ঈদের পর দিন ১৫ মে থেকে রাজশাহীর বাজারে স্থানীয় গুটি জাতের আম প্রথম বাজারে এসেছে। এই জাতের আমের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে তেমন ছিল না। অনেকে আচার করার জন্য এই আম কিনেছেন। ২০ মে গোপাল ভোগ আম বাজারে আসলেও অপরিপক্ব থাকার কারণে প্রথম দিকে ক্রেতাদের কাছে তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে পরিপক্ব হওয়ায় এর চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বাজারে এই জাতের আমের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ১৮০০ থেকে ২৪০০ টাকা দরে গোপালভোগ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে। আর গুটি আম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ২০ মে থেকে গাছ লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ নামতে অনুমতি পেলেও ভালোভাবে না পাকার কারণে অনেকে বাজারে নিয়ে আসেননি। তবে পাড়া-মহল্লায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই আম।

জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী অন্য জাতের মধ্যে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ২৮ মে থেকে বাজারজাত করার জন্য বলা হয়। এছাড়া, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে।

রাজশাহী নগরীর রাণীনগর এলাকার খালেদ সাইফুল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির কাঁচাবাজার করতে গিয়ে ৪০ টাকা কেজি করে তিন কেজি গোপালভোগ আম নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমের তেমন স্বাদও নেই। আবার আকারও বড় নয়।’ একই কথা জানালেন নগরীর হেতমখাঁ এলাকার রহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘গোপালভোগ আমের ঘ্রাণ আছে। কিন্তু এবার সেই ঘ্রাণটা পাচ্ছি না। আবার খেতেও তেমন মিষ্টি লাগছে না। আজকে (বৃহস্পতিবার) বৌবাজারে গিয়ে দেখি গোপাল ভোগ ৫০ টাকা, লখনা ৩৫ টাকা ও গুটি আম ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’

নগরীর শালবাগান এলাকায় অন্য বছরের মতো এবারও আম বিক্রি করছেন মোশাররফ হোসেন। তিনি বললেন, ‘গুটি আম বিক্রি করি না। আর রাণীপছন্দ, ক্ষীরশাপাত আম ভালোভাবে পাকতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তাই গাছ থেকে নামিয়ে বাজারে নিয়ে আসিনি। তবে গোপালভোগ জাতের আম ভরপুর চলছে। আমাদের বাজারে বৃহস্পতিবার গোপালভোগ আম মণপ্রতি ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি আরও জানালেন, তার কাছ থেকে আম কিনলে ঢাকার মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিস খরচ পড়বে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি। আর ঢাকার বাইরে ১৫ থেকে ২০ টাকা পড়বে সার্ভিস চার্জ।

Rajshahi Mango News 27.05 (7)ছোট ভাই মাইনুল ইসলাম সজিবকে নিয়ে অনলাইনে আমের ব্যবসা করছেন পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকার কোচিং সেন্টারের পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় এবার ছোট ভাইকে নিয়ে বাগান থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করছি। ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে টাকা নিয়ে বাগান থেকে বাছাই করে আম সরবরাহ করে থাকি। আজকের (বৃহস্পতিবার) দর অনুযায়ী গোপালভোগ আম ১০ কেজি ঢাকায় কারও কাছে পাঠাতে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা পড়বে। তবে আমের পরিমাণ যত বেশি হবে, টাকার পরিমাণ তত কম হবে। কারণ এক কেজি আম প্যাকিং, শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ যেমন পড়বে। ঠিক এক মণ আম প্রক্রিয়া করতে তেমন খরচ পড়বে। আমরা সাধারণত ১০ কেজির নিচে ক্রেতাদের কাছ থেকে চাহিদা নিই না। আর বাজারে সবরকম আম পাওয়া যায়। কিন্তু বাগান থেকে আমের আকার, রং সবকিছু বিবেচনা করে বাছাই করে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠাতে হয়। কারণ এখন অনেকেই অনলাইনে আমের বেচাবিক্রি করছেন। তাই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হয়।’

আমের স্বাদ ও আকারের ব্যাপারে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, ‘এটি তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। গতবার প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। এবার তেমন হয়নি। আবার গুটি জাতের গাছে যদি গোপালভোগের কলম করা হয়। তাহলে একটু টক হবে। আর বড় গাছের মাথার উপরে আমগুলো ভালোভাবে রোদ পায়। তাই সে আমগুলোর স্বাদ ভালো হয়। আবার সময়ের আগেই যদি গাছ থেকে আম নামানো হয়। তাহলে আমের স্বাদের তারতম্য হতে পারে।’

বাঘা উপজেলার কলিগ্রামের আমচাষি আশরাফুদৌল্লা বলেন, ‘গত কয়েক বছর যাবৎ উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমে পলিব্যাগ জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পলিব্যাগের কারণে আম ফাটা ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। গাছে অনেক দিন যাবৎ আম রাখা যায়।’

এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ্ সুলতান বলেন, ‘আমে পলিব্যাগ ব্যবহারে কোনও ক্ষতি নেই। এতে আমের অনেক উপকার হয়। উপজেলায় আমবাগান রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে। বাঘা উপজেলার আম দেশের মধ্যে সীমাবন্ধ না। দেশের বাইরে এই উপজেলার আমের চাহিদা ও দাম অন্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি।’

চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ টন ধরে মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।

এদিকে এবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা রুটে চালু হয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একটি ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। রাজশাহী থেকে মাত্র এক টাকা ১৭ পয়সায় এ আম রাজধানী ঢাকায় পাঠাতে পারবেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বেলা সাড়ে ১২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি উদ্বোধন করা হয়।