ডোমারে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছে ৩০০ পরিবার

নীলফামারীর ডোমারের বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার (২৮) ও তার স্বামী নাম শেখ ফরিদ (৩২)। দর্জির দোকানের কর্মচারীর কাজের সামান্য আয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে চলতো তাদের সংসার। তাদের ১২ বছরের অনটনের সংসারে ছিল না নিজস্ব কোনও ঠিকানা। ছিল পরের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘর। স্বপ্ন ছিল ঝুপড়ি ঘরের বদলে একদিন তৈরি করবেন পাকা বাড়ি। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে তার সেই স্বপ্ন ছিল অসম্ভব। অবশেষে মুজিববর্ষে মাহমুদার সেই পাকা বাড়ির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর।

মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘অন্যের জমিতে বাড়ি ছিল আমাদের। পলিথিন মোড়ানো সেই ঘরের চালে ছিল অসংখ্য ছিদ্র। রাতে ঝড়-বৃষ্টি হলে ঘুমাতে পারতাম না। সংসারের ঘানি টানতে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও সেলাইয়ের কাজ করে স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি পাকা ঘরের। কিন্তু বিয়ের ১২টি বছর পার হলেও পূরণ করতে পারিনি সেই আশা। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় আমার আশা পূরণ হয়েছে।’ আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে বেজায় খুশি মাহমুদার চোখে-মুখে এখন হাসির ঝিলিক। ব্যস্ত সময় পার করছেন স্বপ্নের সেই ঘর সাজানোর কাজে। থাকার জায়গা না থাকায় হস্তান্তরের আগেই সেই ঘরে উঠেছেন তিনি।

মাহমুদার মতো ঘর পেয়েছেন ওই উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মধ্য পঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন সোহেল রানা (৫০)। পেশায় তিনি  রিকশাচালক। তার সংসার চলে রিকশা চালানোর আয়ে। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের বসবাস ছিল অন্যের জমিতে। এবার ঘর পেয়ে সোহেল রানার স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন, ‘২৪ বছর আগত মোড় বাবা বিয়াউ দিছে। সেলা থাকি কবার পাও নাই স্বামীর নিজের বাড়ি আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় এলা কবার পারিম নিজের একটি বাড়ি আছে।’

এরকম ঘর পেয়েছেন একই ইউনিয়নের মেলাপাঙ্গা গ্রামের ভূমিহীন আব্দুল মতিন (৩৩) ও বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী চেয়ারম্যান পাড়া গ্রামের বেগম বেওয়াসহ (৫২) অনেকেই।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ঘর পেয়েছেন ৩০০ পরিবার। 

সূত্র জানায়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ডোমারে প্রথম পর্যায়ে ৩৮টি ঘর গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। একই প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ পাওয়া ৩০০ ঘরের মধ্যে ২০০টির এখন চলছে রং-তুলির আচড়। এসব ঘর চলতি মাসের ২০ তারিখ হস্তান্তরের কথা রয়েছে। বাকি ১০০ ঘর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ।

উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের ৩৮টি ঘর নির্মাণে প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩০০ ঘরের জন্য প্রতিটির বরাদ্দ পাওয়া গেছে এক লাখ ৮৯ হাজার টাকা।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শাহিনা শবনম ফোনে জানান, ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য কোনও দাতা (ব্যক্তি) দুই শতাংশ জমি সরকারের নামে লিখে দিলে আমরা সেখানে ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছি। এ কাজে জমিদাতার যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি এবং এলাকার মানুষের সহযোগিতায় কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। সবার সহযোগিতায় উপযুক্ত ব্যক্তিরাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন।’

উল্লেখ্য, উপজেলায় মোট খাস জমির পরিমাণ ৯০৪ একর। এর মধ্যে ৮৭৫ একর জমি ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া আছে। বাকি ২৯ একর জমি নিচু হওয়ায় ঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না।