‘প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে টাকা নিতেন হেলেনা জাহাঙ্গীর’

হেলেনা জাহাঙ্গীরের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও সব আইপি টিভি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তার মালিকানাধীন ‘জয়যাত্রা টেলিভিশনের’ ভোলা প্রতিনিধি আবদুর রহমান তুহিন খন্দকার। নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) সকালে বাংলা ট্রিবিউনের ভোলা প্রতিনিধিকে মোবাইল ফোনে ঢাকা থেকে এসব কথা জানান আবদুর রহমান। 

এর আগে সোমবার (০২ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর পল্লবী থানায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন তিনি।

মামলার এজাহারে আবদুর রহমান উল্লেখ করেছেন, ‘জয়যাত্রা টেলিভিশনের ভোলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে ৫৪ হাজার টাকা নিয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। জয়যাত্রা টেলিভিশনে কয়েক মাস কাজ করেছেন তিনি। প্রতি মাসে তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা করে নিয়েছে জয়যাত্রা টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।’

মামলার বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে আবদুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সময় আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। বলেছেন, এটি ক্যামেরার জন্য। অফিস থেকে ক্যামেরা দেওয়া হবে। কিন্তু দেওয়া হয়নি। এরপর প্রতি মাসে তিন হাজার করে আট মাসে আরও ২৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। তখন হেলেনা জাহাঙ্গীর আমাকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে জয়যাত্রা টেলিভিশনের অনুমোদন দেবেন। তখন বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে। এরপরই ওই টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে প্রতি মাসে ভালো বেতন দেওয়া হবে।’ 

আবদুর রহমান আরও বলেন, ‘সবই ছিল তার প্রতারণা। বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল ছিল এটি। টাকা ছাড়া একজন প্রতিনিধিও নিয়োগ দেননি হেলেনা জাহাঙ্গীর। বিভিন্ন অজুহাতে প্রতি মাসে প্রতিনিধিদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। মামলার এজাহারে ৩২ মাস কাজের বেতন দাবি করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে এমন প্রতারণা ও চাঁদাবাজির জন্য হেলেনা জাহাঙ্গীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি দেশের সব আইপি টিভি বন্ধের দাবি জানাই। হেলেনা জাহাঙ্গীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে শিক্ষা নেবে অন্যরা।’ 

এদিকে, পল্লবী থানায় করা দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমানের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই মামলায় চার দিন করে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে শুক্রবার (৩০ জুলাই) গুলশান থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত হেলেনা জাহাঙ্গীরের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ জুলাই রাতে গুলশানের নিজ বাসা থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ক্যাসিনো সরঞ্জাম, হরিণের চামড়াও পাওয়া যায় তার বাসায়। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনসহ চারটি মামলা করা হয়।