সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভাতার কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

পাবনার বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা (বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তাদের) ভাতার কার্ড বিক্রিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে ভাতার কার্ড দেওয়ার অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত আবেদন করেছেন কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান। তবে এ অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা।

সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলাকে শতভাগ সামাজিক নিরপত্তা ভাতার আওতায় আনতে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার। উপজেলায় মোট ২১ হাজার ৫শ’ ৫৩ জন বিভিন্ন ভাতাভোগী রয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নীতিমালা অনুযায়ী ভাতাভোগী নির্বাচন করার কথা কমিটি/ইউনিয়ন পরিষদের। তারা তালিকা তৈরি করার পর উপজেলা কমিটি  অনুমোদন দেওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অফিস। কিন্তু কোনও চেয়ারম্যান-মেম্বারকে না জানিয়ে অর্থের বিনিময়ে ওই কর্মকর্তা পছন্দের কয়েকজন মাঠকর্মীকে দিয়ে ভাতার কার্ড নির্ধারণ ও বিতরণ করেন।

উপজেলার রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রূপপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন ভাতার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসে মোবাইল ফোন নম্বর, ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ড জমা দেওয়া হয়। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তা মোতালেব সরকার ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অবগত না করে মাঠকর্মী এনামুল হকের সঙ্গে যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে নিজের ইচ্ছেমতো তালিকা তৈরি করে ভাতার বই বিতরণ করেন। পুরনো ভাতাভোগীদের বই ওয়েব সাইটে তালিকাভুক্তির সময় মাঠকর্মীরা গোপনে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের ফোন নম্বর বসিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও প্রমাণ মিলেছে। ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত পুরনো ভাতার বই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অনলাইন তালিকা থেকে বাতিল করে দিয়েছেন।

রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়ে একাধিকবার সমাজসেবা অফিসার মোতালেব সরকারকে জানিয়েও কিছু হয়নি। সুস্থ মানুষ প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন, অথচ প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার জন্য দিনের পর দিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে স্বামী জীবিত থাকা নারীদের বিধবা ভাতা দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে সংশোধন করতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি কোনও কথার তোয়াক্কা করেন না। আমি সমাজসেবা অধিদফতর মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মোতালেব সরকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, ‘মোতালেব সরকার বেড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসে প্রায় নয় বছর ধরে কর্মরত। তার নিজ উপজেলায় দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে চলেন। সবার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ভাতা কার্ড বাণিজ্যের পাশাপাশি জামায়াত নেতা ডা. আব্দুল বাসেদ খানের সঙ্গে পরামর্শ করে তালিকা তৈরি করেন। তার নানা অপকর্মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না।’

তবে সব অভিযোগ অসত্য দাবি করে বেড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ভাতা প্রাপ্তির জন্য জনগণ অনলাইনে আবেদন করেন, আমরা কোনও তালিকা করি না। প্রথম দিকে, কারিগরি জটিলতায় কিছু ভুল হয়েছিল, তা সংশোধনও করা হচ্ছে। শতভাগ ভাতাভোগীর তালিকা তৈরি এখনও শেষ হয়নি। পর্যায়ক্রমে সবাই ভাতার আওতায় আসবেন।’

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল কবীর বলেন, ‘বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জেলা কার্যালয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’