জামানত হারিয়ে আর নির্বাচন না করার ঘোষণা শফি চৌধুরীর

জীবনে আর নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জামানত হারানো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। তবে নির্বাচন না করলেও সুখে-দুঃখে, সামাজিক অনুষ্ঠানে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

রবিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান শফি আহমদ চৌধুরী। সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শফি আহমদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিলেট-৩ আসনের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। মানুষের সুখে-দুঃখে অতীতেও পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকবো। এবারের নির্বাচনে ভোটের ফলাফল দেখে আমি হতবাক। ইভিএমের মাধ্যমে অনৈতিক কাজ করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নেতাকর্মীরা আমার পাশে ছিলেন না। তারা জাপার হয়ে কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জীবনে আর নির্বাচনে অংশ নেবো না।’

বিবৃতিতে নিজ নির্বাচনি এলাকার সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শফি আহমদ। বিশেষ করে নির্বাচনে তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালে আমি রিকশা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৫ দলের প্রার্থীর সঙ্গে বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু তৎকালীন এরশাদ সরকারের নির্দেশে কয়েক’শ ভোটে পিছিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী দেখানো হয়। এরপর থেকে সংসদ সদস্য না হয়েও ব্যক্তিগতভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হই। নির্বাচিত হওয়ার পর দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বাস্তবায়নসহ এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগসহ জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে গেছি।

শফি চৌধুরী বলেন, স্থানীয় জনসাধারণের চাপে এবারের নির্বাচনে অংশ নিই। নির্বাচনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। নির্বাচনি ক্যাম্পেইনে যেখানেই গেছি, হাজারো মানুষের সাড়া পেয়েছি। কিন্তু ভোটের ফলাফলে আমি হতবাক। এবার ইভিএমে ভোট হওয়ায় অনেক কেন্দ্রে আমার ভোটাররা অভিযোগ করেন, ফিঙ্গার দেওয়ার পর কে বা কারা তাদের ভোট কনফার্ম করে দেয়, এটি সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ হয়েছে।’

তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাকে কোনও ধরনের সহযোগিতা না করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। যা বিএনপির রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে আমি দীর্ঘদিন দলের পেছনে অর্থ, শ্রম ও সময় দিয়েছি। যার সাক্ষী এই অঞ্চলের মানুষ। 

জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান (নৌকা) ৯০ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান (লাঙ্গল) পান ২৪ হাজার ৭৫২ ভোট। আর শফি আহমদ চৌধুরী পান ৫ হাজার ১৩৫ ভোট। পরাজিত হয়ে শফি চৌধুরী জামানত হারান।

সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা গেলে উপ-নির্বাচন হয়।   নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান নৌকা প্রতীকে ৯০ হাজার ৬৪ ভোট পেয়ে এমপি হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান লাঙ্গল প্রতীকে পান ২৪ হাজার ৭৫২ ভোট। শফি আহমদ চৌধুরী পান পাঁচ হাজার ১৩৫ ভোট। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত হন শফি আহমদ চৌধুরী।