চলছে ১৬০ ইউপির নির্বাচন, কেন্দ্রে নারী ভোটার বেশি

দেশের ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, চলবে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এছাড়াও আজ দেশের ৯টি পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার পরিষদের কয়েকটি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা, ভোট বর্জন এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও সকাল থেকে বড় ধরনের কোনও সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।  কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ভালো ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধিরা। তাদের দেওয়া তথ্যমতে কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, খুলনা বিভাগের ১৬ উপজেলার ১২০টি ইউনিয়ন পরিষদে সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। খুলনার পাঁচটি উপজেলা, বাগেরহাটের ৯টি উপজেলা এবং সাতক্ষীরার দুইটি উপজেলার ১২০টি ইউনিয়নে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতরাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটাররা কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এসময় পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি প্রচুর নারী ভোটারও দেখা যায়। 

খুলনায় বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে ভিড় জমান ভোটাররাখুলনা জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫৬ জন, ৩০৬টি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮১ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৪৬৪ জন প্রার্থী লড়ছেন।  ইউনিয়নগুলোতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন ও নারী ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন।

খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার এম মাজহারুল ইসলাম বলেছেন,  সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি চলছে। 

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে। এবার সন্দ্বীপে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে মগধরা, বাউরিয়া, সারিকাইত ও হারামিয়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষ প্রার্থী না থাকায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে না। গাছুয়া, সন্তোষপুর, আমানউল্লাহ, ঘরিশপুর, রহমতপুর, আজিমপুর, মুছাপুর, মাইটভাঙ্গাসহ বাকি ৮ ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। তবে মেম্বার পদে সবগুলো ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে নারী ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। 

টেকনাফের বিভিন্ন কেন্দ্রে নারী ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিলটেকনাফ প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারে টেকনাফের চারটি ইউনিয়নের নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।  বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে নারী ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সাবরাং কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহপরীর দ্বীপ উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহপরীর দ্বীপ মাঝার পাড়াসহ আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে পুরুষদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।

বাগেরহাটে পুরুষদের পাশাপাশি কেন্দ্রে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতোবাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ভোটের আগের রাতে নির্বাচনি সহিংসতায় এক নারী নিহত হয়েছেন। তবে সকাল থেকে ভোট শুরুর পর বিশৃঙ্খলার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে জেলার ৯টি উপজেলার ৬৫টি ইউনিয়নের ৫৯৯টি কেন্দ্রের সবকটিকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতোমধ্যে ৬৫টি ইউনিয়নের ৩৮টিতে চেয়াম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। 

কক্সবাজারের ভোট কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতিকক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভা এবং চার উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম ধাপের নির্বাচন চলছে। নির্বাচনকে ঘিরে কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ভোট শুরুর পর এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।  কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন বলেন, ভোটের জন্য তিন স্থরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

নোয়াখালীতে সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ভালোনোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, কবিরহাট পৌরসভা, হাতিয়ার সাতটি ও সুবর্ণচর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের আজ নির্বাচন হচ্ছে। তবে হাতিয়ার পাঁচটি ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। এদের মধ্যে সরকার দল মনোনীত দুই প্রার্থীও রয়েছেন। এছাড়া কবিরহাট পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক রায়হান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় শুধুমাত্র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিকে সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরষদের পাশাপাশি প্রচুর নারী ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে।

এদিকে ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৪৪ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অনেক প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। দলীয় প্রতীকের এ ভোটে বিএনপি না থাকলেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল অংশ নিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বিএনপিরও কয়েকজন নেতাকর্মী।