তিস্তায় বিলীনের অপেক্ষায় কমিউনিটি ক্লিনিক

তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক। হুমকির মুখে রয়েছে নামাভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ আরও কয়েক শ’ ঘড়বাড়ি। গত দেড় মাসে তিস্তার ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে শত শত পরিবার। তীব্র ভাঙনে তিস্তা পারের বাসিন্দারা সর্বহারা হলেও জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া ভাঙন প্রতিরোধে টেকসই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

ঘড়িয়ালডাঙ্গার গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থানীয়দের চিকিৎসার প্রাথমিক ভরসা। চিকিৎসাকেন্দ্রটি বর্তমানে নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। তিস্তার ভাঙনে যেকোনও মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে ভবনটি। এতে ওই গ্রামের অন্তত আট হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার স্থানীয়রা জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রায় ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আট শতক জমির ওপর কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির অনুদানের জমিতে নির্মিত ক্লিনিকটি ওই এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিস্তার চলমান ভাঙনে স্থানীয় বাসিন্দারা বাস্তুহারা হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসার আশ্রয়স্থলটিও তারা হারাতে বসেছেন।

কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গতিয়াশম কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই এলাকার প্রায় আট হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন। সরকারি ওষুধসহ প্রাথমিক চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রয়েছে এখানে। ভবনটি না থাকলে ভোগান্তিতে পড়বেন সেবাগ্রহীতারা।’

ক্লিনিকটির জমিদাতা হাদিউজ্জামান আনসারি বলেন, ‘আমরা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা ও স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছি। যদি পানি উন্নয়নবোর্ড জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে হয়তো ক্লিনিকটি রক্ষা করা যাবে না।’

ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার বলেন, ‘ক্লিনিকটি নদীতে বিলীন হলে এই এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।’ চেয়ারম্যান আরও জানান, বৃহস্পতিবার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ‘আমি ক্লিনিকটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি তারা দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের করণীয় কিছু নেই। আমরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’

জানতে চাইলে পাউবো কুড়িগ্রামে সদ্য যোগ দেওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পানি কমে যাওয়ায় তিস্তার ভাঙনের হার আগের তুলনায় কম।’

কমিউনিটি ক্লিনিকটি রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আজই দেখে আসলাম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে জরুরি ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেটা স্পষ্ট করেননি এই প্রকৌশলী।