X
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

অসময়ে ভাঙছে ব্রহ্মপুত্রের পাড়, দুশ্চিন্তায় স্থানীয়রা

জামালপুর প্রতিনিধি
১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০০আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০০

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে অসময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বেশ কিছু দিন ধরে চলা ভাঙনে ইতোমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি। কৃষকরা হারিয়েছেন ভুট্টা, মরিচ, বাদামসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে বসতভিটাসহ অন্যান্য স্থাপনা।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দাবি, জনপদ রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছে না। ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।

আর কর্তৃপক্ষ বলছে, নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিক বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে স্থায়ী বাঁধের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। কিন্তু হঠাৎ যেন এ নদ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। রাত-দিন অবিরত ভাঙছে নদের পাড়। শুষ্ক মৌসুমে নদের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলেও, ভাঙন শুরু হওয়ায় সর্বস্ব হারাচ্ছেন স্থানীয়রা। দুই মাস ধরে চলা ভয়াবহ ভাঙনের কবলে নদের প্রায় এক কিলোমিটার তীর বিলীন হয়ে গেছে।

ঋণ নিয়ে ফসল ফলানোয় এখন দেনা পরিশোধের শঙ্কায় কৃষকরা

কৃষকরা জানান, নদীতীরবর্তী চরের কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমিতে তারা আবাদ করেছিলেন ভুট্টা, মরিচ, বাদামসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল, যা ভাঙনের কবলে চলে গেছে নদীগর্ভে। আর এসব ফসলের অবশিষ্ট যা রয়েছে, তা ঘরে তুলতে পারবেন কি না, তাও জানেন না তারা। কৃষিঋণ নিয়ে এসব ফসল ফলানোয় এখন দেনা পরিশোধ নিয়েও শঙ্কা রয়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, নূর হালিম, মালেকাসহ কয়েকজন জানান, শীতের এই শুষ্ক মৌসুমে এমন নদীভাঙনের চিত্র তারা কখনোই দেখেননি। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে ফসলি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়বে চর আমখাওয়া ইউনিয়নের পাটাদহপাড়া গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদতীরবর্তী কয়েক হাজার বাসিন্দার ঘরবাড়ি।

এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্যান্য স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। জনপদ রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছে না। ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সামনের বর্ষা মৌসুমে বন্যা দেখা দিলে নদীভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে, তখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও হবে মারাত্মক।

বহ্মপুত্রের তীরবর্তী ৫০০ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে

এদিকে আকস্মিক এই ভাঙন ঠেকাতে এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা নিজেদের উদ্যোগে সহায়তা ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বালুর বস্তা, বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রমজান আলী, সুরুজ মিয়া ও আব্দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন নেমে পড়েছেন পাড় রক্ষায়। তারা নিজেদের শেষ সহায়-সম্বল রক্ষায় এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ও নিজেদের শ্রমে বালুর বস্তা ও বাঁশের খুঁটি পুঁতে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু তাদের এই উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসছে না।

তারা বলেন, আমরা একদিকে বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করি, অন্যদিকে আবার ভাঙন শুরু হয়। তাই স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

চর আমখাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া বলেন, দুই মাসের ভাঙনে বহ্মপুত্রের তীরবর্তী ৫০০ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ও অর্থকরি ফসলি জমি হুমকির মুখে। প্রায় এক কিলোমিটার তীর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বালুর বস্তা, বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর আমখাওয়া ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে পাড় প্রতিরক্ষামূলক কাজ করা হবে। এ ছাড়া স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক বাঁধের জন্য প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।

অসময়ে নদীভাঙনের কারণে স্থানীয় মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কোনও ধরনের পূর্বপরিকল্পনা না থাকায় এ অঞ্চলের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। নদীপাড়ের মানুষের শেষ সম্বলটুকু রক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এমন প্রত্যাশা সুশীল সমাজের।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
নদীভাঙন রোধে অবৈধ ড্রেজার মালিকদের আইনের আওতায় আনা হবে: ফাওজুল কবির খান
ঈদের ছুটির প্রথম দিনেই বাড়ি ফিরতে বাস টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড়
নগরভবনের তালা খুলবে কবে?
সর্বশেষ খবর
৪৪ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী বরিশালে, উদ্বেগ আছে করোনা নিয়েও
৪৪ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী বরিশালে, উদ্বেগ আছে করোনা নিয়েও
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
সুনামগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
সুনামগঞ্জে পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ দিতে এসে আদালতে ধরা, সেফ কাস্টডিতে প্রেরণ
‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ দিতে এসে আদালতে ধরা, সেফ কাস্টডিতে প্রেরণ
সর্বাধিক পঠিত
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
ইসরায়েলি হামলার পর তেহরানের হাসপাতালে ‘রক্তস্নান’
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
জামায়াতের অনুপস্থিতির বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকজামায়াতের অনুপস্থিতির বিষয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’
‘ভয় দেখিয়ে জুলাই গণহত্যার বিচার থেকে দূরে সরানো যাবে না’
ডিসি ফিট লিস্টের জন্য ডাক পেলেন ৪০ কর্মকর্তা
ডিসি ফিট লিস্টের জন্য ডাক পেলেন ৪০ কর্মকর্তা