পঞ্চগড়ে উদ্বোধনের ৮ দিনের মাথায় সড়কে ফাটল

নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার ও তদারকির অভাবে পুনর্নির্মাণের ৮ দিনের মাথায় ভেঙে গেছে পঞ্চগড় চিনিকল ভায়া মাড়েয়া-দেবীগঞ্জ সড়ক।  একইসঙ্গে সড়কটির ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত পিচ উঠে গেছে। সঠিকভাবে কিউরিং ও রোলিং না করায় গোটা সড়কে উঁচু-নিচু রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও গর্ত ও ফাটলও দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা এ বিষয়ে অভিযোগ করলে সওজের একটি প্রতিনিধি দল গত বুধবার সরেজমিন সড়কটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনে অভিযোগের সত্যতা পেলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সওজের কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নিম্নমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার, সঠিকভাবে পাথর, বালি ও বিটুমিনের মিশ্রণ না হওয়া এবং ঠিকমতো রোলিং না করায় সড়কটি এমন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সড়কটির জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে পাবনা জেলার ধ্রুব কন্সট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। প্রতিষ্ঠানটি সওজর সঙ্গে ছয় কোটি ৮১ লাখ টাকার চুক্তিতে কাজ শুরু করে।

উদ্বোধনের ৮ দিনের মাথায় সড়কে ফাটলঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি পুনর্নির্মাণে আট ইঞ্চির ২টি বালু ও পাথরের লেয়ার বেষ্টিত দেড় ইঞ্চি কার্পেটিং করা হয়। বালু পাথরের মিশ্রণের ওপরে বিটুমিন প্রাইম কোড ব্যবহার করা হয়। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি কাজটি শেষ হলে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু ৮ দিনের মাথায় সড়কটির বিভিন্ন জায়গা ফুলে ওঠে। কয়েক কিলোমিটার সড়কে গর্ত ও ফাটল দেখা দেয়।
নির্মাণের কয়েকদিন পরেই সড়কের এমন দশা দেখে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে। অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার (২০ জানুয়ারি) সওজ রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সওজের একটি প্রতিনিধিদল সড়কটি পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দিনাজপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বুলবুল হোসাইন ও পঞ্চগড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকীও ছিলেন।
বকদুরঝুলা এলাকাবাসীর অভিযোগ, গুণগত ও পরিমাণমত উপকরণ ব্যবহার না করায় সড়কটি ব্যবহারের দু’তিনদিনের মাথায় ভাঙতে শুরু করে। সড়কটি নির্মাণকাজের সময় সওজ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ছিল কম আর তদারকিতে ছিল সওজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নীলফামারী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী পঞ্চগড় সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে পঞ্চগড় সওজ অফিসে কোনও কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনে পঞ্চগড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজী হননি। তিনি সড়ক নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে সওজ রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সড়কটি পরিদর্শন করেছি। ঠিক করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ১৫ দিনের সময় দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে ধ্রুব কন্সট্রাকশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদেরও কোনও কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

/আরএ/এফএ/