লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ ২৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ২৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ঢাকা থেকে যাওয়া বার্ন বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসায় তারা সুস্থ হয়েছেন। সেই সঙ্গে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৭ জন। তারাও আশঙ্কামুক্ত।

রবিবার ১৬ জন ও সোমবার ১২ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিষয়টি জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নলছিটি উপজেলায় সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চ থেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ৮১ জনকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৯ জনকে পাঠানো হয় ঢাকায়। তারা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

বাকি ৬১ জনের ২৮ জন এরই মধ্যে সুস্থ হওয়ায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বরিশাল হাসপাতালে ৩৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন তিন জন। তারা সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো বরিশালে চিকিৎসক না থাকায় ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিতে হয়েছে। ঢাকা থেকে গিয়ে সাত চিকিৎসক দগ্ধদের চিকিৎসা দিয়েছেন। ওই সাত চিকিৎসক হলেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুরুল আলম, তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন একই ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাসরুর উর রহমান, রেজিস্ট্রার ডা. মোরশেদ কামাল, ফেস বি রেসিডেন্ট ডা. মৃদুল কান্তি সরকার, ডা. শাওন বিন রহমান এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আল মোনতাসির বিল্লাহ ও ডা. ইসতিয়াক সুলতান।

রোগী ও স্বজনরা বলছেন, যেকোনও দুর্যোগ শুরু হলে সরকার থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। পরে তা বাস্তবায়ন করা হয় না। লঞ্চে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা দেওয়ার বেলায়ও তাই হয়েছে। রোগীদের দেখতে এসে বন্ধ বার্ন ইউনিট চালুর আশ্বাস দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে দগ্ধদের চিকিৎসায় ঢাকা থেকে আনা হয় সাত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। অবশ্য শুরুতে হাসপাতালের পরিচালক ৫০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে টিম গঠন করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন।

ঢাকা থেকে যাওয়া চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে ১৯ রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে তাদেরও এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন ছিল বার্ন ইউনিট এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এর একটিও না থাকায় এখানে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকার চিকিৎসকরা মূলত দগ্ধদের চিকিৎসা দিয়েছেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের চিকিৎসক এবং নার্সরা তাদের সহায়তা করেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বন্ধ রয়েছে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে। গত বছরের ২৮ এপ্রিল দুর্ঘটনায় এই বিভাগের প্রধান চিকিৎসক এমএ আজাদ সজল মারা যান। এরপর থেকে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা বন্ধ। চিকিৎসক সংকট না কাটায় ইউনিটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ১২ মার্চ হাসপাতালের নিচতলায় আট বেড নিয়ে এই ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। চিকিৎসক পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিটটি চালু করা হবে। 

তিনি বলেন, এরই মধ্যে অগ্নিদগ্ধ ২৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে ৩৩ জন চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে আরও ১৮ জন সুস্থ আছেন। দু’একদিনের মধ্যে এরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ ৫১ জনের তালিকা দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ঘটনার দিন ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়। গত দুই দিনে আরও তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।