যমুনার তীর রক্ষা প্রকল্পে ছাত্রলীগ নেতার চাঁদাবাজি!

ধুনটে যমুনার তীর

‘স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতার চাঁদাবাজির কারণে’ বগুড়ার ধুনটে তিনদিন বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ।

চাঁদা ও সিসি ব্লক পরিবহনের কাজ না পেয়ে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সালেহ স্বপন ও তার লোকজন বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজে বাধা দেওয়ায় তিনি দিন কাজ বন্ধ ছিল বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মাসুম রব্বানী।

ছাত্রলীগ নেতা স্বপন চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে জানান, তিনি ব্লক পরিবহনের কাজ চেয়েছিলেন বটে, কিন্তু কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেননি। ঠিকাদার কেন কাজ বন্ধ রেখেছিলেন তা তার জানা নেই।

প্রশাসন সূত্র জানায়, বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ধুনটের ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বরইতলি ঘাট এলাকায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে। কাজটি করছে বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকার শাহরিয়ার কন্সট্রাকশন।

চলতি বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মাসুম রব্বানী অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে কাজ শুরুর পর থেকে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আবু সালেহ স্বপন ও তার সমর্থক ক্ষমতাসীনরা এ প্রকল্প থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেন।

তিনি জানান, নদী থেকে উত্তোলনের পর প্রতি ঘনফুট বালুর ওপর ১০ পয়সা হারে চাঁদা দিতে হয়। তিন বছরে স্বপন ও তার লোকজনকে মামলার খরচসহ বিভিন্ন খাতে তিন লক্ষাধিক টাকা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখে মামলার খরচের নামে স্বপন পাঁচ হাজার টাকা আদায় করেন।

ব্যবস্থাপক আরও জানান, স্থান সংকুলান না হওয়ায় শহরাবাড়ি এলাকায় দেড় লাখ সিসি ব্লক তৈরি করা হয়। শুক্রবার ব্লকগুলো নদীপথে ট্রলি দিয়ে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের কয়াগাড়ি ও রঘুনাথপুর গ্রামে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। দুপুরে ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আবু সালেহ স্বপন ও তার লোকজন প্রথমে চাঁদা দাবি করেন। রাজি না হলে তিনি ব্লকগুলো পরিবহনের কাজ চান।

প্রতিটি ব্লক পরিবহনের বিনিময়ে দুই টাকা করে মোট তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। নির্ধারিত ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ঠিকাদার তাকে (স্বপন) কাজটি দিতে অস্বীকৃতি জানান।

ব্যবস্থাপক জানান, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রলীগ নেতা ও তার লোকজন লেবার ও ট্রাকের চালক-হেলপারদের তাড়িয়ে দেন। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। গত তিনদিন দুই শতাধিক লেবার ও শ্রমিককে বসিয়ে রেখে দেড় লক্ষাধিক টাকা মজুরি দিতে হয়েছে।

তিনি আরও জানান, তার প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তো বটেই, ধুনটে নদী ভাঙনের শিকার স্থানীয়দের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্ট হয়েছে।

মাসুম রব্বানী বলেন, বিষয়টি প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মাঝে জানাজানি হওয়ায় ক্যাডাররা সরে গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনুরোধে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি।

/এইচকে/