স্কুলড্রেস না পরায় অসুস্থ ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

দীর্ঘদিন করোনার কারণে বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে পুরোদমে শুরু হয়েছে পাঠদান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো বিদ্যালয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা। স্কুল খোলার আনন্দে সকালে ড্রেস ছাড়াই সাধারণ পোশাকে বিদ্যালয়ে হাজির হয়। কারণ ট্রেইলার্সের দোকানে তার স্কুল ড্রেস তৈরি সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসেম আলী তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। একই সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস থেকে বের করে দেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কার্যক্রমকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা পৌর শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের সুপারি ব্যবসায়ী শাহিনুর ইসলামের মেয়ে। স্বর্ণা থ্যালাসেমিয়া রোগী।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন স্বর্ণাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক হাসেম আলী। এ সময় শিক্ষার্থীরা ড্রেস তৈরি হয়নি জানালেও অনুমতি দেননি প্রধান শিক্ষক।

সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা জানায়, স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষকরা। এখনও আমার ড্রেস তৈরি হয়নি। এরই মধ্যে ক্লাস শুরু হয়েছে। সকালে বিদ্যালয়ে গেলে আমি ও আরও কয়েকজনকে ক্লাস থেকে অপমান করে বের করে দেন প্রধান শিক্ষক। ড্রেস তৈরি সম্পন্ন হয়নি জানিয়ে ক্লাস করার অনুমতি চাইলে বকাঝকা করেন প্রধান শিক্ষক।

স্বর্ণার বাবা শাহিনুর ইসলাম বলেন, সকালে অসুস্থ মেয়েকে বিদ্যালয়ে দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের জানিয়েছি ড্রেস তৈরি সম্পন্ন হয়নি। দর্জির কাছ থেকে ড্রেস নিয়ে আগামীকাল থেকে পরে স্কুলে আসবে। মেয়েকে রেখে আসার কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। আমার মেয়ে অসুস্থ। এভাবে তাকে বের করে না দিয়ে আমাকে বললেই বাড়ি নিয়ে আসতাম। 

তিনি বলেন, মেয়েকে মানুষ করার চেষ্টা করছি সাধ্যমতো। প্রতি মাসে মেয়েকে তিন থেকে ৪ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। এতে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। তার চিকিৎসার জন্য ইতোমধ্যেই আমার শেষ সম্বল বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছি। আমার মেয়েকে ড্রেসের কারণে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া অমানবিক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসেম আলী বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীকে ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসার জন্য বারবার বলা হয়েছে। এরপরও অনেকে ড্রেস ছাড়াই এসেছে। এজন্য তাদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী মন্ডল বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস পরার জন্য তাগিদ দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে। তবে এরকম কোনও কথা তাদের বলা হয়নি, ড্রেস পরে না এলে ক্লাস থেকে বের করে দিতে হবে। বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ওই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলবো।