প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সবার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাথমিক শিক্ষায় যদি কারও ঘাটতি থেকে যায়, তাহলে তার যতই বয়স বাড়ুক আর পড়াশুনা করুক, তা আর কখনও পূরণ হয় না।’
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজশাহী পিটিআই সম্মেলন কক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিকালে রাজশাহী আঞ্চলিক তথ্য অফিস থেকে পাঠানো এক তথ্যবিবরণীতে এসব জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিধান রঞ্জন বলেন, ‘জনগণের ধারণা হলো, প্রাইমারিতে লেখাপড়া হয় না, এখানে যারা অফিসার আছেন, তারা লেখাপড়া ছাড়া অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। এই ধারণা আপনাদেরই ভুল প্রমাণ করতে হবে। কারণ একজন শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারী হিসেবে এটা আপনার দায়িত্ব।
‘শিক্ষা হলো একটি শিশুকে তার জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। একটি শিশুকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে আমরা সবকিছু শেখাই না। প্রাইমারি স্কুলের একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। একটি শিশু জন্মের পরে প্রথমে পরিবার, পরে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভাষা শিখে প্রাইমারিতে আসে। প্রাইমারি স্কুল হচ্ছে শেখার একটি মাধ্যম।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘মাতৃভাষা শেখা শুধু ভাষা শেখা নয়, এটি অন্য কিছু শেখার একটি মাধ্যম। মাতৃভাষা যে শিখে এসেছে, আমাদের কাজ তাকে লিপি ও লিখিত ভাষার সঙ্গে পরিচয় করানো। লিখিত ভাষা মৌখিক ভাষার চেয়ে ভিন্নরকম। আপনি যা মুখে বলছেন তা লিখতে গেলে অন্যরকম হয়। আপনি যখন একটি শিশুকে লিখিত ভাষা চেনালেন তার মানে তাকে জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করার সক্ষমতা বা চাবি তৈরি করে দিলেন। তখন সে যেকোনও বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারবে।’
প্রাইমারি স্কুল শিশুদের পড়তে শেখায় এমন মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাইমারির পরের স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পড়ে পড়ে শেখানো হয়। তাই প্রাইমারি স্কুল অন্য প্রতিষ্ঠানের থেকে গুণগতমানে ভিন্ন। একটি শিশু প্রাইমারি স্কুলে মৌলিক শিক্ষা অর্জন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের দুটি ভাষায় শিক্ষিত করে তুলছি– একটি হলো মাতৃভাষা, অন্যটি গাণিতিক ভাষা। এর বাইরে আমরা শেখাই নীতি ও নৈতিকতা। একটি শিশু জন্মের সময় ভাষা নিয়ে জন্মায় না, সে ভাষা শেখার দক্ষতা নিয়ে জন্মায়। ভাষাকে যখন আয়ত্ত করে তখন সে ভেতর থেকে সামাজিক হয়ে যায়। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের মুখ্য বিষয় হচ্ছে নৈতিকতা।’
এ সময় প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সবার বিন্দু বিন্দু অবদান জাতীয় অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন– প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টুকটুক তালুকদার এবং রাজশাহী বিভাগের প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক মো. সানাউল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশগ্রহণকারীরা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব পেশ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। পরে তিনি রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘর পরিদর্শন করেন।