টিএসপি সারের ১০ নমুনার ৯টিতেই ভেজাল

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) যশোরের বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষের বুঝে না নেওয়া পাঁচ ট্রাক টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সারের নমুনায় ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি ওই সারের ১০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করিয়েছে। তার মধ্যে নয়টি নমুনায় সারে সম্পূর্ণ ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। রবিবার টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে পরিবহন ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরাপত্তা জামানত টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান জানান, সারের ১০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে নয়টি নমুনায় সম্পূর্ণ ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবশিষ্ট নমুনাটি ভালোর কাছাকাছি কিন্তু সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত নয় বলে প্রমাণ মিলেছে।

বিষয়টি তদন্তে বিসিআইসির লেবার অ্যান্ড স্টাফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড বিসিআইসির নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড থেকে গত ১৭ মার্চ পাঁচটি ট্রাকে করে ৭০ মেট্রিক টন টিএসপি সার যশোরে আনা হয়। সারসহ ট্রাকগুলো বাফার গুদামের ইয়ার্ডে রয়েছে।

যশোর বাফার গুদাম সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড থেকে যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার জন্য মাসিক বরাদ্দের টিএসপি সার যশোর বাফার গুদামে আনা হয়। সেখান থেকে সার বিসিআইসি ডিলারের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হয়।

গত ৯ জানুয়ারি যশোর বাফার গুদামে সার পরিবহন করার জন্য চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটের পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স সৈয়দ এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয় টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড। এরপর থেকে সার পরিবহন করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, যশোর জেলার জন্য বরাদ্দ ৭০ মেট্রিক টন টিএসপি সার গত ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে পাঁচটি ট্রাকে করে যশোর বাফার গুদামে আনা হয়। সার পৌঁছানোর পর বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ইনচার্জ) কাছে ভেজাল সন্দেহ হওয়ায় তিনি সার খালাস না করে ট্রাকগুলো গুদামের বাইরে রাখার নির্দেশ দেন। পরদিন ১৮ মার্চ বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। 

এ ঘটনায় টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড উপপ্রধান রসায়নবিদ রেজাউল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন– বিসিআইসির উৎপাদন বিভাগের ব্যবস্থাপক শফিকুল কবীর ও বিসিআইসির উপপ্রধান হিসাবরক্ষক নির্মল কুমার দত্ত। তদন্ত কমিটি যশোরে এসে গত ১৯-২০ মার্চ তদন্ত করেন। কমিটি সারের ১০টি বস্তা থেকে সারের নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক গবেষণাগার, যশোরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠান। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। ওইদিন সন্ধ্যায় বিসিআইসির এক জরুরি বৈঠক বসে। বৈঠকে পরিবহন ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল, তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রবিবার এক চিঠিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বিষয়টি তদন্তে বিসিআইসির লেবার অ্যান্ড স্টাফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে যশোরে গিয়ে তদন্ত শুরু করবে বলে জানানো হয়েছে।