অবৈধভাবে পুকুর খননের অভিযোগ, সড়ক-ফসলি জমিতে ধস

বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের বাকশাপাড়া পাকা সড়ক থেকে নাটাবাড়ি কোনাইপাড়া পর্যন্ত সড়কের পাশের ১২ বিঘা জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে লাখ লাখ টাকার মাটি (টপ সয়েল) বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। খননের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভেঙে পুকুরে বিলীন হচ্ছে এবং পাশের ফসলি জমিতে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ওই এলাকাবাসী বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে এসব অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কামরুজ্জামান মাসুদ। তিনি বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী হিটলারুজ্জামান হাকিম, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও কামরুজ্জামান রঞ্জু ১২ বিঘা জমির ওপরের মাটি অবৈধভাবে কেটে ২৯ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। মাটি বিক্রির পর সেখানে বিশাল জলাশয় বা পুকুর তৈরি হয়েছে। সেটিকে ফিশিং প্রজেক্ট দেখিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই শতাংশ হার সুদে পাঁচ কোটি টাকার প্রকল্প দাখিল করে সেই অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

‘তারা এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কাটার ফলে আশপাশের ফসলি জমিতে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার এই খননের কারণে পাশের রাস্তার চার ভাগের তিন ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। এতে জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এ সংকীর্ণ সড়ক দিয়ে যান চলাচল করতে পারছে না। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত ১ এপ্রিল এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় চার জন শিশু আহত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাটিকাটার সঙ্গে জড়িত হিটলারুজ্জামান হাকিম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার সহযোগীদের দিয়ে এসব অবৈধ কাজ করাচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে তারা উল্টো ভয় দেখান। যে ১২ বিঘা জমিতে খনন চলছে তার মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান মুন্টুর ২৯ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া আরও একজনের পাঁচ একর জমি দখল করেছেন তারা।’

এর আগে এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত গত ২২ মার্চ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কামরুজ্জামান রঞ্জুকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। জব্দ করা হয় মাটি খননের যন্ত্রপাতি। ওই সময় মোবাইল কোর্টের কাজে বাধা দেওয়ায় রঞ্জুর ছেলে শাকিলকেও আটক করা হয়েছিল। অভিযানের পর কয়েকদিন মাটি খনন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালীদের বাধা দিলে তারা গ্রামছাড়া করার হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বাকশা নাটাবাড়ি সড়কটি সুরক্ষা, ফসলি জমি ধসে যাওয়া রোধ এবং অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। না হলে এলাকার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুজ্জামান ইসলাম, সমাজসেবী আরিফ হোসেন ও আবু সালেহ মোহাম্মদ বাচ্চু।