‘বানের কারণে গ্রামে কোরবানি কম হইসে, তাই শহরে আইছি’

‘বানের কারণে গেরামে এবার কোরবানি কম হইসে। এর লাগি কেউ কোরবানির মাংস পাইছে কেউ পায় নাই। তাই আমরা মাংসের লাগি টাউনও আইছি।’

রবিবার (১০ জুলাই) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের পুরান লক্ষণশ্রী গ্রামের মনমিলা খাতুন। জেলায় বন্যার ক্ষত এখনও শুকায়নি। কারও বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, আবার কারও বসতঘরে এখনও কাদা-পানি থাকায় ফিরতে পারেননি। প্রায় সাত হাজার বন্যাদুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। যারা কোনোরকেম বাড়ি ফিরতে পেরেছেন, তারা বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

লক্ষণশ্রী গ্রামের জমিলা বিবি বলেন, ‘এই ঈদে পিঠাপুলি করতে পারি নাই। সবকিছু বানের পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বসতঘর ছাড়া কিছু নাই। সকালে উঠে গোসল করে টাউন আইছি মাংসের লাগি। দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে মাংস সংগ্রহ করে বিকালে রান্না করে সবাই খাবো।’ 

শহরের বড়পাড়া এলাকার মতলিব মিয়া বলেন, ‘বন্যার কারণে এবার বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই পশু কম কোরবানি হয়েছে। গ্রামের তুলনায় টাউন কোরবানি বেশি হয়। এ জন্য আমরা মাংসের জন্য বের হয়েছি।’

অচিন্তপুর গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বন্যার কারণে ঈদের আনন্দ নেই। সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে কোরবানি দিতে পারেনি।’

কুতুবপুর গ্রামের জলিল মিয়া বলেন, ‘বাচ্চাদের গায়ে নতুন জামাকাপড় দিতে পারিনি। ঘরে খাওনের চাল নেই। কীভাবে ঈদ করবো!’

সুনামগঞ্জের বানভাসি মানুষ কোরবানির মাংস পাওয়ার আশায় শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ব্যাগ নিয়ে ঘুরছেন। শহরের হাজীপাড়া, বাধনপাড়া, বড়পাড়া, তেঘরিয়া ও ষোলঘর হাছনগর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় তারা মাংসের জন্য এসেছেন। ঈদের নামাজ আদায়ের পর মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। 

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, ‘বন্যার কারণে জেলার ৯০ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অনেকের ঈদ করার সামর্থ্য নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে, তবে পরিমাণ খুবই কম।’

জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ উপহার চাল ও মাংস বিতরণ করা হয়েছে। সাতটি উপজেলার সাত হাজার মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপনে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এবার আনুমানিক ৩০ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে।