একসঙ্গে পড়তো তারা ৩ জন, একসঙ্গেই মৃত্যু

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের নিহত ১১ যাত্রীর মধ্যে তিন জনই হাটহাজারী উপজেলার কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের এবার ওই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। তিন ছাত্রকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তিন ছাত্রের মৃত্যুতে এ স্কুলে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (৩০ জুলাই) থেকে এ শোক পালন করছেন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। 

আরও পড়ুন: মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত

এ স্কুলের তিন শিক্ষার্থী হলো– আবুল কাসেমের ছেলে সামিরুল ইসলাম হাসান, আবদুল মাবুদের ছেলে ইকবাল হোসেন মারুফ এবং মোজাফ্ফর আহমেদের ছেলে মোছাব আহমেদ হিসাম। হিসাম হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এবং বাকিরা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ছিল।

কেএস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মীরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের মধ্যে তিন জনই এই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে আরও চার জন স্কুলের সাবেক ছাত্র রয়েছে।’

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন নিহত ১১ জন

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তিন ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে স্কুলে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার স্কুলের সব শিক্ষক নিহতদের স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সববেদনা জানাবো। সোমবার স্কুলে নিহতদের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হবে।’

স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সাধনচন্দ্র নাথ বলেন, ‘নিহত তিন ছাত্র অত্যন্ত ভালো ছিল। তাদের মধ্যে হিসামের মা থাকেন কানাডায়। হিসামেরও এসএসসি পরীক্ষার পর কানাডায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন করেছিল সে।’

আরও পড়ুন: চমেক হাসপাতালে নিহত ১১ জনের স্বজনদের আর্তনাদ 

নিহতদের সহপাঠী কাজী এম সাজিদ বলেন, ‘আমি কে এস নজুমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র। এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা তিন জনই আমার বন্ধু ছিল। এভাবে তাদের হারাব তা কখনও ভাবতে পারিনি।’ সাজিদ তার তিন বন্ধুর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘নিহত ১১ জনই হাটহাজারী উপজেলার আমান বাজার এলাকার আশপাশের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে তিন জন এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং একই স্কুলের ছাত্র।’

আরও পড়ুন: ‘কখন যে ট্রেনের ধাক্কায় পড়ে গেছি বুঝতে পারিনি’

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জন হলো– হাজী মো. ইউসুফের ছেলে গোলাম মোস্তফা নিরু, আবুল কাসেমের ছেলে সামিরুল ইসলাম হাসান, আবদুল হামিদের ছেলে জিয়াউল হক সজীব, জানে আলমের ছেলে ওয়াহিদুল আলম জিসান, বাদশা চৌধুরীর ছেলে রিদোয়ানুল হক চৌধুরী, আবদুল মাবুদের ছেলে ইকবাল হোসেন মারুফ, মোজাফ্ফর আহমেদের ছেলে মোছাব আহমেদ হিসাম, মোতাহের হোসেনের ছেলে মোস্তফা মাসুদ রাকিব, আবদুল শুক্কুরের ছেলে সাজ্জাত হোসেন, রনি শীলের ছেলে শান্ত শীল এবং আবদুল আজিজের ছেলে আসিফুল ইসলাম আসিক।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৯ জুলাই) আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৬ জন শুক্রবার সকাল ৮টায় হাটহাজারীর আমান বাজার থেকে মাইক্রোবাসযোগে খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে যান। ঘোরাঘুরি শেষে ফেরার পথে দুপুর পৌনে ২টার দিকে বারতাকিয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেন। এতে ঘটনাস্থলেই ১১ জন নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচ জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।