গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেফতার

বগুড়ার গাবতলীতে যৌতুক না পেয়ে মীম খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের বাবা আনোয়ার হোসেন গাবতলী থানায় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর ও ভাসুরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। রবিবার সকালে মামলার পর পুলিশ স্বামী ইব্রাহিম মণ্ডলকে (২৬) গ্রেফতার করেছে।

গাবতলী থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার ইমরানকে বিকালে আদালতে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্র জানায়, কৃষিশ্রমিক আনোয়ার হোসেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের তল্লাতলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৬ সালে মেয়ে মীমকে পার্শ্ববর্তী কালাইহাটা উত্তরপাড়ার করিম মণ্ডলের ছেলে ইব্রাহিমের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় ৭৫ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়া হয়। কিছুদিন পর ইব্রাহিম আরও যৌতুকের জন্য মীমের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। সংসার জীবনে তাদের মিজান (৪) ও সোবহান (৬ মাস) দুটি ছেলে হয়। মেয়ে ও নাতিদের কথা ভেবে আনোয়ার মাঝে মাঝে বাজার করে পাঠাতেন। তারপরও নির্যাতন বন্ধ না হলে তিনি গত মাঘ মাসে এনজিও থেকে সুদে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জামাইকে দেন। ইব্রাহিম ব্যবসার জন্য আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। নির্যাতন বন্ধ না হলে মা আছিয়া বেগম গিয়ে মেয়ে মীম ও দুই নাতিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। ইব্রাহিম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই পাঁচ মাস আগে সারিয়াকান্দির কালিয়াহাতি গ্রামে আবারও বিয়ে করেন। খোরপোষ না দেওয়ায় মীম আদালতে মামলা করেন।

এরপর মামলা থেকে বাঁচতে ইব্রাহিম গত ৪ আগস্ট স্থানীয়ভাবে মীমাংসার মাধ্যমে সন্তানসহ মীমকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আবারও নির্যাতন শুরু করেন। মেয়েকে রক্ষায় আনোয়ার ধারদেনা করে আরও যৌতুক দিতে রাজি হন। তারপরেও গত ৬ আগস্ট শনিবার মধ্যরাতে ইব্রাহিম ও তার বাবা করিম মণ্ডল (৬০) যৌতুকের জন্য মীমকে বেধড়ক মারপিট করে ঘাড় ভেঙে দেন। এ কাজে ইব্রাহিমকে চাচাতো ভাই রেজাউল মণ্ডল সহযোগিতা করেন। তারা কৌশলে মীমকে ঘরে আটকে রেখে বাবা আনোয়ারকে ফোন দিয়ে বলেন, মীম খুব অসুস্থ, মেডিক্যালে নিতে হবে। খবর পেয়ে রাতেই মীমকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি জানান, গৃহবধূ মীমের মরদেহ উদ্ধার করে ওই হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রবিবার সকালে নিহতের বাবা আনোয়ার হোসেন থানায় জামাই, বেয়াই ও আত্মীয়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এর পরপরই প্রধান আসামি ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়। বিকালে তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।