টিকলো না স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধ, জনপদে লোনাপানি

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী এখন ডুবন্ত জনপদ। প্রায় দুই হাজার মানুষ সোমবার স্বেচ্ছাশ্রমে চরামুখা গ্রামের কপোতাক্ষ নদের ধসে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ করেন। কিন্তু নির্মাণ শেষে বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই প্রবল জোয়ারে সেটি ভেঙে আবারও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ডুবে যায় ১০টিরও বেশি গ্রাম।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওসমান গনি খোকন বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে দক্ষিণ বেদকাশী, চরামুখা, হলুদবুনিয়া, বীণাপানি, পাতাখালী, উত্তর চোরামুখা, পদ্মপুকুরসহ ১০টির বেশি গ্রামে। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ১৬ আগস্ট সকালে আবারও সবাইকে নিয়ে বাঁধ মেরামতের পরিকল্পনা রয়েছে।’

ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের তৈয়েব আলী বলেন, ‘গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে ছয় ঘণ্টা কাজ করে বাঁধ দিয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু এরপর আবারও ওই বাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে।’

বীণাপানি গ্রামের গোপাল মিস্ত্রি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ছয় বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছিলাম। লোনা পানিতে তা ডুবে গেছে। ধানের আশা-ভরসা শেষ। নদীর জোয়ার-ভাটার সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে জীবন। গবাদিপশু রাখার জায়গা নেই। ঘর-বাড়ি ডুবে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন এলাকার মানুষ।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার একই স্থানে বাঁধ ভাঙছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গাফিলতি করে সঠিকভাবে মেরামত না করেনি। একমাস আগে রিং বাঁধ দেওয়া হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ।

লোকালয়ে প্রবেশ করছে লোনাপানিএ বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে দক্ষিণ বেদকাশীর যে বাঁধটি মেরামত করা হচ্ছিল তা আবার ভেঙেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। দরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

পাউবোর সাতক্ষীরা বিভাগ-২-এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘প্রথম বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর রিং বাঁধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি মজবুত করা যায়নি। সেখানে মাটির মান খুব বেশি ভালো নয়। তা ছাড়া জোয়ার-ভাটার কারণে বেশি সময় কাজ করা যায় না। এ কারণেই মূলত বাঁধটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আপাতত পানি প্রবেশ বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর রিং বাঁধ মজবুতের চেষ্টা করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই ভোরে চরামুখার এই বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার ধসে যায়। সে সময় ভাঙা স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। এরপর ১৩ আগস্ট দুপুরে উচ্চ জোয়ারে ওই রিং বাঁধের ৫০ ফুট ভেঙে গিয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কয়েকশ’ মানুষের চেষ্টায় তা মেরামত করা হয়। তবে সে সময় নদীর পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল শতাধিক মাছের ঘের। ১৪ আগস্ট সেই বাঁধটির ২০০ মিটার ভেঙে যায়।