রাবি ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ৬ বছরেও প্রকাশ হয়নি

রাবি ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হলেও ছয় বছরেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
এদিকে এ ঘটনার দুইদিন পরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবিরের নেতৃত্বে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। কিন্তু ছয় বছরেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে ওঠেনি। এতে করে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে জড়িত শিবিরকর্মীদের বিরুদ্ধে আজও ব্যবস্থা নিতে পারেনি রাবি প্রশাসন।
এ ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, ‘তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এরপর আর কিছু বলতে পারব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে এ ঘটনাটি ঘটেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে তোলা হয়েছে কিনা তা পরে কাগজপত্র দেখে বলতে হবে।’
অন্যদিকে, এ ঘটনায় গুরুতর আহত আরও চার ছাত্রলীগ কর্মী পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘটনার চার বছর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হলেও তা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতেই কেটে গেছে বলে জানিয়েছেন আহত ছাত্রলীগ কর্মীরা।

২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবিরের ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এই সংঘর্ষে শিবিরের ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনকে নির্মমভাবে খুন করে লাশ শাহ মখদুম হলের পেছনের ম্যানহলে ফেলে রাখে। একই রাতে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগের আরও তিন কর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। তারা হলেন বাংলা বিভাগের সাইফুর রহমান বাদশা, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফিরোজ মো. আরিফুজ্জামান ও রুহুল আমীন লেলিন। আসাদুর রহমান নামের আরেক ছাত্রলীগ কর্মীকে শিবির ক্যাডাররা হাতুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এ ঘটনার পর থেকে তিনি অন্ধ।

ঘটনার পরদিন তৎকালীন রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে শিবিরের ৩৫ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও অনেক শিবির নেতাকর্মীর নামে নগরীর মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি মামলা করা হয়।

২০১২ সালের ৩০ জুলাই রাজপাড়া থানার তৎকালীন ওসি জিল্লুর রহমান চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফারুক হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ১১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন জানান, এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। হত্যা মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আছে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে আছে। সব আসামি হাজির না হওয়ায় বিচার শেষ হতে দেরি হচ্ছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু জানান, সোমবার সকালে কালো ব্যাচ ধারণের মধ্য দিয়ে শহীদ ‘ফারুক হোসেন’ দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর শোক র‌্যালি, শীতবস্ত্র বিতরণ, আলোচনা সভা এবং মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

/বিটি/ এএইচ/