চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য

সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য মহানগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলছে। দৈনন্দিন প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহারের কারণে মানুষের খাবার, নদী ও সাগরের পানিতে প্লাস্টিকের অণুকনার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম আয়োজিত নান্দনিক চট্টগ্রাম গড়তে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব ও করণীয় শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত ওই সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, পরিবেশবান্ধব নান্দনিক চট্টগ্রাম মহানগর গড়তে সব ধরনেন ঝুঁকি মোকাবিলা করতে আমি দ্বিধা করবো না।

তিনি বলেন, যে পাহাড় কাটবে, তাকেই জেলে যেতে হবে। খাল-নালা, ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আগামীতে নিয়মিত তা অব্যাহত থাকবে। দখলকারীরা তথাকথিত যতই প্রভাবশালী হোক, আমরা তাদের তোয়াক্কা করি না, আগামীতেও করবো না।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, এখন থেকে পরিকল্পিত পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার সঠিক বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ১০ বছরে চট্টগ্রাম মহানগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম শহরকে আধুনিক পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক করে তার উভয় পাশে আধুনিক নগর গড়ে তোলার কথা বলেন।

সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুমিনুর রহমান বলেন, পাহাড়, নদী, খাল দখলকারী মসজিদের ইমাম বা পুরোহিত যেই হোক না কেন, তাদের নীতিগত দুর্বলতা থাকবে। দুর্বত্তদের বিরুদ্ধে সঠিক আইনের প্রয়োগ করা হলে তারা পালাবেই।

তিনি আরও বলেন, ‌‘জঙ্গল সলিমপুর থেকে পাহাড়খেকোকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমাকে বদলির হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেছি, আমি যেখানেই চাকরি করি, আমার বেতন অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো কম হবে না। আমরা যারা সরকারি চাকরি করি, দুর্বৃত্ত ও খারাপ লোকদের ভয় না পেলে অনেক কাজ করতে পারবো। আমাদের পাহাড় অভিযানকে সর্বস্তরের জনগণ সমর্থন দিয়েছে। যারা পাহাড়, বালু, সরকারি গাছ খায়, তারা কখনো ভালো মানুষ নয়। তাদের বিতাড়িত করা সহজ।

Ctg

সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, একজন আইনজীবী, একজন মেয়র একজন জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের পরিরেশ রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। প্রত্যেক নাগরিক নিজ জায়গা থেকে সচেতন থেকে সামাজিক আন্দোলন করলে পরিবেশবান্ধব চট্টগ্রাম মহানগরী গড়ে তোলা সম্ভব।

চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা অন্যায়ের প্রতিবাদ কলম দিয়ে করার সাহস রাখেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কারণে আমরা হাইকোর্টে মামলা করতে পেরেছি। আজ এই অনুষ্ঠান সীমাহীন প্রেরণা জুগিয়েছে, যা আগামীতে চট্টগ্রামের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় আমি আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে কাজে লাগবে।

প্রধান বক্তা হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মফিদুল আলম বলেছেন, জনগণ সচেতন হলে আমাদের কাজ করাটা সহজ হয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পাহাড়, খাল, নদী রক্ষায় প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি চৌধুরী ফরিদের সভাপতিত্বে দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চুয়েট ভিসি (প্রাক্তন) ও ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আলীউর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিডিএ বোর্ড মেম্বার স্থপতি আশিক ইমরান।