X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

রাজশাহীতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শব্দদূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী

দুলাল আবদুল্লাহ, রাজশাহী
১১ মে ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ১১ মে ২০২৫, ০৮:০১

রাজশাহী নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে গত চার বছরে শব্দের মাত্রা বেড়েছে সাত ডেসিবেলের বেশি। ২০২২ সালে এ চত্বরে শব্দের মাত্রা ছিল ৯০ ডেসিবেল। শনিবার (১০ মে) একই স্থানে শব্দের মাত্রা মেপে পাওয়া গেছে ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল। শনিবার (১০ মে) স্থানীয় বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ পরীক্ষা পরিচালনা করে বলছে, রাজশাহীতে শব্দদূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক।

সংস্থাটি বলছে, বর্তমান নগরায়ণের যুগে শব্দদূষণ দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের জন্য মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ঘুম অনিয়মিত হয়, রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়, হার্টের ক্ষতি করে, এমনকি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমাতে পারে।

পরিবেশবাদী এ সংস্থা চার বছর ধরে রাজশাহী নগরের কয়েকটি স্থানে শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে আসছে। তবে এবার শুধু পরীক্ষা করা হয়েছে এ চত্বরে। শব্দের মাত্রা পরীক্ষার সময় তারা শব্দদূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে।

সংস্থার সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত চার বছর এ চত্বরে শব্দ মাপা হয়। এতে দেখা গেছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ওই এলাকায় শব্দের মাত্রা পরীক্ষায় ৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। পরের বছর ২০২৪ সালে পাওয়া যায় ৯৬ দশমিক ৩ ডেসিবেল। এবার একই স্থানে পাওয়া গেল ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল।

বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, শব্দের সর্বোচ্চ ঘনমাত্রার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন এলাকাকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্প এলাকা। এ বিধিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় রাতে ৬০ ও দিনে ৭০ ডেসিবেল থাকতে হবে। এতে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকায় রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। শিল্প এলাকায় এই মাত্রা রাতে ৭০ ও দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং মিশ্র এলাকায় রাতে ৫০ ও দিনে ৬০ ডেসিবেল থাকার কথা বলা হয়েছে।

শনিবার সংস্থা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শব্দের তীব্রতা নিয়ে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির (২০২২) প্রকাশ করা ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের প্রথম ও রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ শব্দদূষণকারী শহর হিসেবে দেখানো হয়। যেখানে রাজশাহীতে শব্দের পরিমাণ দেখানো হয় ১০৩ ডেসিবেল। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন থেকে প্রতি বছর শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে আসছে বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শহরের কামারুজ্জামান চত্বরের মতো জনবহুল স্থানে দিনের বেলা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একই স্থানে শব্দের মান নির্ণয় করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় শনিবার সেখানে শব্দের মাত্রা বেশি দেখা যায়।

সংস্থার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘শহরের ব্যস্ততম মিশ্র এলাকা কামারুজ্জামান চত্বর। এখানে আবাসিক হোটেলও আছে। শনিবার আমরা গড় শব্দের মাত্রা পেয়েছি ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল। মানুষের শ্রবণসীমা অনুযায়ী এটা দিনের বেলায় সর্বোচ্চ থাকার কথা ছিল ৬০ ডেসিবেল। এটি খুবই উদ্বেগজনক।’

শব্দের মাত্রা পরীক্ষার সময় তারা শব্দদূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে

তিনি আরও বলেন, ‘শব্দের মাত্রা মাপার সময় ওই এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিল। দেখা গেছে, এ যানবাহনসহ অন্য যানবাহন অযথা হর্ন বাজাচ্ছে। অটোরিকশাগুলোর ভেঁপু হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত।’ 

শব্দদূষণ কমাতে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘শব্দদূষণের প্রভাব শুধু মানুষের ওপর নয়, প্রতিটি পশুপাখির ওপর পড়ে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর। আমের শহর রাজশাহীতে আম ও জামজাতীয় ফলের গাছ, নিম ও শজনে-জাতীয় উপকারী গাছ লাগানো যেতে পারে। যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সজনে গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফলে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।’

পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণার তথ্যমতে, সাহেববাজার, ভদ্রা, তালাইমারী ও লক্ষ্মীপুরেও শব্দের মাত্রা  ৭৫ ভাগ বেশি। শব্দদূষণের অন্যতম কারণ যানবাহনের শব্দ ও হর্ন, বিভিন্ন নির্মাণকাজ। দিনরাত উচ্চশব্দে অতিষ্ঠ মানুষ। অতিরিক্ত শব্দ স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকসসহ স্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

পরিবেশ অধিদফতর ও নগর পুলিশ বলছে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োগ করছে আইন। তবে তাতেও কমছে না শব্দদূষণ।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শব্দদূষণের মাত্রা কমাতে পুলিশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এখন যেহেতু দূষণের মাত্রা অনেক বেশি সে কারণে যথাযথ আইন প্রয়োগ করবে পুলিশ।’

রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শব্দদূষণের মাত্রা কমাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২০২২ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদনের তথ্যে, সারা বিশ্বের নগরগুলোর মধ্যে শব্দদূষণের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিল রাজশাহী। আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে আসছি। চালকদেরও অযথা হর্ন বাজাতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
নিকলীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অনুমোদনহীন কামাল ব্রিকস, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
নিষিদ্ধ পলিথিন, শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে দেশজুড়ে অভিযান
বিশ্ব বায়ু দিবস আজ
সর্বশেষ খবর
এনবিআর কর্মকর্তাদের কলমবিরতি অব্যাহত, রাজস্ব ভবনে সেনা-পুলিশ মোতায়েন
এনবিআর কর্মকর্তাদের কলমবিরতি অব্যাহত, রাজস্ব ভবনে সেনা-পুলিশ মোতায়েন
একসঙ্গে ৩ বোনের এইচএসসি পরীক্ষা
একসঙ্গে ৩ বোনের এইচএসসি পরীক্ষা
মার্কিন দাবি অনুযায়ী মাদক বিরোধী অভিযান জোরালো করেছে চীন
মার্কিন দাবি অনুযায়ী মাদক বিরোধী অভিযান জোরালো করেছে চীন
মেজর লিগ সকারে সবচেয়ে বেশি বেতন মেসির, রেকর্ড মায়ামির
মেজর লিগ সকারে সবচেয়ে বেশি বেতন মেসির, রেকর্ড মায়ামির
সর্বাধিক পঠিত
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা
নূরুল হুদাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জনের জামিন
নূরুল হুদাকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতার ৩ জনের জামিন