‘আপনারা ভোট দেননি, খোদা আমাকে এমপি বানিয়েছেন’

ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তার এই বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে এমপি তুহিন জানিয়েছেন, এমন কথা তিনি বলেননি।

জানা যায়, শনিবার বিকালে নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কালিয়াপাড়া বাজারে ওয়ার্ড যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তুহিন ওই বক্তব্য দেন।

ওই ভিডিওতে আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনকে বলতে দেখা যায়, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খোদা আমাকে এমপি বানিয়েছেন, আপনারা না। আমাকে আপনারা ভোট দেননি। আপনাদের কাছে আমি ভোট চাইতে আসিনি।’

ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘জবাব চাই আপনাদের কাছে। জবাব মুখে দিতে হবে, পারবেন না দিতে। ভালো না লাগলে সোজা চলে যাবেন, উল্টো দিকে। আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমি যা কথা বলবো, প্রশ্ন করবো, জবাব আপনাদের দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি খোদা যখন আমাকে এমপি বানালেন তখন আমার সঙ্গে যিনি (সাবেক মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম) ছিলেন। তিনি আমার সমপর্যায়ের মানুষ ছিলেন না, অনেক বড় মানুষ ছিলেন। তিনি দেখতে সুন্দর। আমার চেয়ে দুই, তিন, পাঁচ, ছয় ইঞ্চি লম্বা ছিলেন। এ দেশের মানুষ কি তখন ভেবেছিল জেনারেল সাহেবের (সাবেক মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম) হঠাৎ বিদায় হবে, আর তুহিনের হঠাৎ নান্দাইলে আগমন হবে, আপনারা চান নাই। এমনও মানুষ আছে আমাকে আপনারা চিনতেন না। এমনও মানুষ আছে, রাজনীতির বাইরের মানুষ, আমাকে জীবনে দেখেননি। কথা ঠিক না বেঠিক?’

তুহিন বলেন, ‘নান্দাইলের মানুষ অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। নান্দাইলের আলেম সমাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারতো না। ভোর রাতে ফজরের আজানের সময় মসজিদে আজান দিতে পারতো না নরতকীর নাচের আওয়াজে। তখন মানুষ কষ্ট পেতো। ঠিক তেমনি এক মুহূর্তে খোদা তাকে (সাবেক মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম) জব্দ করলেন, আমার মতো তুচ্ছ মানুষকে এমপি বানালেন। আমাকে আপনারা ভোট দেননি। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসিনি।’

ওই সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন– উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক বাহার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর ছিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আজিজুল ইসলাম, স্থানীয় চেয়ারম্যান তাসলিমা আক্তার, যুবলীগ নেতা মো. শাহজাহান প্রমুখ।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘এমপি সাহেব এমন কোনও কথাই তার বক্তব্যে বলেননি। একটি কুচক্রী মহল সুপার এডিট করে ভিডিওটি ফেসবুকে একটি ফেক আইডি থেকে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তাকে খুঁজছি, তাকে পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ওই বক্তব্যের বিষয়ে এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন বলেন, ‘আমি বক্তব্যে এমন কোনও কথা বলিনি। ভিডিওটি কেটে সুপার এডিট করে ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল জানান, ‘এমপি সাহেব যদি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের বক্তব্য শুধু তার নিজের না, আওয়ামী লীগ তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’