রাতে সন্তান প্রসব, সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী

রাতে সন্তান প্রসব করে সকালে পরীক্ষায় অংশ নিলো বাল্যবিয়ের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী রুনা আক্তার। বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।

রুনা মানিকগঞ্জ সদরের কর্নেল মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, ‘লেখাপড়ায় রুনার অনেক আগ্রহ। রাতে সন্তান প্রসব করে সকালে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে।’ তিনি রুনার সফলতা কামনা করেন।

সাটুরিয়া সরকারি আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্ধারিত আসনে বসেই পরীক্ষার্থী রুনা পরীক্ষায় অংশ নেয়। শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও মানসিকভাবে খুব দৃঢ়চেতা ছিল সে।’

রুনার পরিবার এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ সালে বাল্যবিয়ের শিকার হয় রুনা। সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের পোলসুড়া গ্রামের আবদুস সালামের মেয়ে রুনা আক্তারকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন পাশের দেলুয়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম।

বুধবার সন্ধ্যায় প্রসূতি রুনার প্রসব-ব্যথা উঠলে স্বজনরা তাকে উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। এরপর রাত সোয়া ৮টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়েসন্তান প্রসব করে সে। পরদিন সকালে বৃহস্পতিবার এসএসসির গণিত বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অসুস্থতার পরও কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।

পরীক্ষার বিষয়ে রুনা আক্তার বলে, ‘আশা করি পরীক্ষায় ভালো ফল করবো। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি করার ইচ্ছে আছে। সবার কাছে দোয়া চাই।’

প্রসঙ্গত, বাল্যবিয়ে হলো অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিয়ে। বাংলাদেশে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর। এর আগে বিয়ে করলে সেটি বাল্যবিয়ে বলে গণ্য হবে।

বাল্যবিয়ে করার শাস্তি

এই আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তার জন্য দুই বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে উভয় দণ্ড পেলে অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এ ছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারী বা পুরুষ বাল্যবিয়ে করলে এক মাসের আটকাদেশ কিংবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় ধরনের শাস্তি পাবেন।

বাল্যবিয়ে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যান্য অভিভাবকের শাস্তি

আইনের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, বাবা-মা অভিভাবক অথবা অন্য কোনও ব্যক্তি, আইনগতভাবে বা আইনবহির্ভূতভাবে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর কর্তৃত্ব সম্পন্ন হয়ে বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করলে অথবা করার অনুমতি বা নির্দেশ দিলে অথবা নিজেদের অবহেলার কারণে বিয়ে বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তার জন্য তিনি দুই বছর অথবা ন্যূনতম ছয় মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তবে উভয় দণ্ড পেলে অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।