সিত্রাংয়ের রাতে উত্তাল সাগরে ঝাঁপ দেওয়া ২৩ জন বেঁচে ফিরলেন যেভাবে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে সাগর যখন উত্তাল তখন মাছ ধরার ট্রলার ‘এফবি জেসমিন’ মাঝ সাগরে ঢেউয়ের তোড়ে টালমাটাল। প্রবল ঢেউ ডিঙিয়ে নিরাপদে নোঙর করতে পারেনি ট্রলারটি। ডুবে গেছে মাঝ সাগরে। প্রাণ রক্ষায় ড্রাম নিয়ে উত্তাল সাগরেই ঝাঁপ দেন ২৩ জেলে। এরপর তারা যেভাবে বেঁচে ফিরেছেন এটি সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে।

জানা গেছে, ঝাঁপ দেওয়ার পর উত্তাল সাগরেই ভাসতে ভাসতে ভারতের সমুদ্রসীমানায় ঢুকে পড়েন তারা। এই দৃশ্য আকাশ থেকে দেখতে পায় ভারতের টহলরত একটি প্লেন। মুহূর্তে তাদের বাঁচাতে লাইফ জ্যাকেট ছুড়ে ফেলে। পরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘ভিজয়া’ এসে তাদের উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া জেলেদের বাড়ি ভোলা জেলায়।

এদিকে, ঝড়ের কবলে পড়া এসব জেলের গত দুদিনেও হদিস না পাওয়ায় স্বজনরা ভেবেছিল কেউ বেঁচে নেই। স্বজনরাই কেবল জানতেন, তারা সাগরে গেছেন মাছ ধরতে।

mongla1

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদরদফতর) স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় জানায়, এসব জেলেকে মোংলা কোস্টগার্ড স্টেশনে আনা হয়েছে। তাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদারের মধ্যস্থতায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, আজ দুপুরে সমুদ্র থেকে উদ্ধার হওয়া এসব জেলেকে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমার শূন্যরেখায় বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলায়’ হস্তান্তর করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। জেলেদের বরাত দিয়ে কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান আরও বলেন, ‘সোমবার ঝড়ের কবলে পড়ে তাদের ফিশিং ট্রলার এফবি জেসমিন সাগরে ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারে থাকা তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ড্রাম নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভাসতে ভাসতে তারা বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েন। পরে তাদের ভারতের কোস্টগার্ড উদ্ধার করেন। তারা এখন সুস্থ আছেন’।

mongla3

এদিকে স্বজনরা ভেবেছিলেন তারা কেউ বেঁচে নেই। আজ স্বজনদের কাছে তাদের হস্তান্তরের সময় চোখের পানিতে মোংলা কোস্টগার্ড স্টেশনে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়।

উদ্ধার হওয়া জেলে মো. রাকিব হোসেন (২০) বলেন, ‘মাছ ধরা নিষেধ জেনেও পেটের দায়ে সাগরে গেছি। সংসারে অভাব, কী করবো বলেন? এরপর তো ঝড়ের কবলে পড়ে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

ভাইকে কাছে পেয়ে ভোলার চরফ্যাশন থেকে আসা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সংসারে অভাবের কারণে ভাই ফরহাদ হোসেনকে (২৫) মাছ ধরতে পাঠাই। এরপর ঝড়ের খবর শুনে পরিবারের সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। ভেবেছিলাম ভাই মনে হয় বেঁচে নেই। পরে কোস্টগার্ড থেকে খবর পাই বেঁচে আছে। এ জন্য তাকে নিতে এসেছি।’

ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘ঝড়ের কবলে পড়ে উত্তাল সমুদ্রে যাওয়া জেলেদের বেঁচে ফিরে আসার বিষয়টি অলৌকিক। আমার কাছে এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। বিষয়টিকে সবাইকে মানবিক হিসেবে দেখা উচিত। তবে সাগরে যাওয়া জেলেদের লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।’