দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৪২ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘদিনেও পাকা হয়নি। বর্ষা এলেই পুরো সড়কজুড়ে কাদার মধ্যে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষদের। অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিতে পড়তে হয় বেকায়দায়। একাধিকবার আবেদন করলেও সড়ক পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানরা। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় রাস্তা পাকা হচ্ছে না বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের কাঁচা রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী। পাশের কাটলা ইউনিয়নসহ সাতটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের কাঁচা রাস্তার অবস্থা একই। এসব রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। রাস্তা সংস্কার এবং পাকা সড়ক তৈরির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুদৃষ্টি কামনা করেন এলাকাবাসী।
মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সব সড়ক কাঁচা। আমরা এমপি সাহেব এবং ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত সড়ক পাকা হয়নি।’
শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন বলে, ‘রাস্তায় কাদা থাকায় স্কুলে যেতে পারি না। পা থেকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় কাদার মধ্যে হাঁটতে গিয়ে উল্টে পড়ে বইখাতা, জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’
বিষ্ণপুর গ্রামের অনিল কুমার বলেন, ‘রাস্তার কাদার মধ্যে গ্রামের লোকজন যাতায়াত ও হাটবাজার করতে পারে না। চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।’
কাটলা গ্রামের বাসিন্দা রাশেদ খান বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে গ্রাম থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই-তিন হাজার মানুষ শহরে যাতায়াত করে। তাদের বেশির ভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। তারা শহরমুখী না হলে সংসার চলবে না। কিন্তু রাস্তা খারাপ হওয়ায় শহরে যেতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
মিরাজুল ইসলাম নামে আকেরজন বলেন, ‘ভোট এলে অনেকেই রাস্তা পাকা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। ভোট পার হয়ে গেলে তাদের আশ্বাসের কোনও ফল পাওয়া যায় না।’
জানতে চাইলে মুকুন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের যে রাস্তাগুলো কাঁচা রয়েছে সেগুলো পাকা করতে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একটি তালিকা দিয়েছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানিয়েছি। এ পর্যন্ত তিনবার তালিকা দিয়েছি। কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে সেটা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে।’
বিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী এফএম রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘বলতে গেলে এখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হলেন এমপি সাহেব। সব বিষয় তিনি জানেন। তার ডিও লেটার ছাড়া কোনও কাজ হয় না। স্থানীয় চেয়ারম্যান কোনও রাস্তার কাজ করতে চাইলে এমপি সাহেবের মাধ্যমে ডিও লেটার দিয়ে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হয়।’
বিরামপুর উপজেলা চেয়াম্যান খায়রুল আলম বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রাস্তা করার ক্ষমতা নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানাই। তিনি সে অনুযায়ী রাস্তা করে দেন।’